কোরআন আল্লাহ তায়ালার অবতীর্ণ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আগমনকারী মানব জাতির হেদায়েতের জন্য এ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন আল্লাহ তায়ালা। এটি যে পড়বে, বুকে ধারণ করবে এবং জীবনের আলোকবর্তিকা হিসেবে গ্রহণ করবে, প্রত্যেককেই স্তর অনুপাতে মর্যাদা দেওয়া হবে। মর্যাদাবান এ গ্রন্থের উসিলায় আল্লাহ মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। যে তেলাওয়াত করে তারও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং যে মা-বাবার উসিলায় মানুষ কোরআন হিফজের সুযোগ লাভ করেছে তাদেরও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
প্রতিটি মানুষের হেদায়েতের জন্য কোরআন অবর্তীণ করা হয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে শুধু তারাই সিক্ত হবে, যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হবে। অতএব সৎপথে পরিচালিত হতে চাইলে অবশ্যই কোরআনকে আকড়ে ধরতে হবে।
কোরআন তেলাওয়াত করলে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কোরআন তেলাওয়াতে অশান্ত হৃদয়ে প্রশান্তি মিলে। কোরআনে কারিমই একমাত্র কিতাব, যা পাঠ করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে আল্লাহতায়ালার ভয় সৃষ্টি হয়। যারা সব কিছুতে আল্লাহর ওপর ভরসা করেন, তারা কোরআরে কারিম তেলাওয়াত করে আনন্দ পান। এ প্রসঙ্গে কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মোমিন তো তারাই, আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে। আর যখন তাদের সামনে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে।’ (সূরা আনফাল:২)।
কোরআন ধারণের যত পদ্ধতী আছে তার একটি হলো কোরআন হেফজ করা। কোরআনের হাফেজরা সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী কোরআনের ধারক। কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে হাফেজদের বিশেষ মর্যাদার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি যে নিজে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০২৮)
হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এই কোরআনের কারণে অনেক মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং অনেক মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেন। অর্থাৎ যারা কোরআনের ওপর আমল করে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন আর যারা আমল করে না তাদেরকে অপমানিত করেন।’ (মুসলিম : ১৮৯৭)। কোরআন কারিম অনুযায়ী আমল ওই ব্যক্তিরই ভাগ্যে জোটে, যে তা শিক্ষালাভ করে। আর অনেক হাদিস দ্বারা সমর্থিত, কোরআন শিক্ষা করা, হিফজ করা, অর্থজ্ঞান আয়ত্ত করাও একটি স্বতন্ত্র আমল।
মা-বাবা মানুষের অমূল্য সম্পদ। যার মূল্য পরিশোধ করে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীতে মা-বাবার চেয়ে বেশি হিতাকাক্সক্ষী ব্যক্তি দ্বিতীয় আর কেউ নেই। শৈশবে সন্তানের পড়ালেখা ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মা-বাবার যেমন করণীয় রয়েছে, তেমনি মা-বাবার বৃদ্ধ বয়সে কিংবা অসুস্থ হলে তাদের জন্য সন্তানের অনেক করণীয় রয়েছে। তাদের ইন্তেকালের পরও সন্তানের অনেকগুলো করণীয় বিষয় থাকে। মৃত্যুর পর মানুষের নিজের আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মৃত ব্যক্তির দুনিয়ায় রেখে যাওয়া সুসন্তানের দোয়া ও সদকায়ে জারিয়ার সওয়াবের দরজা বন্ধ হয় না।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের সন্তান কোরআন তেলাওয়াত করবে, তাদের মা-বাবাকে হাশরের দিন নূরের টুপি পরানো হবে। হজরত মুয়াজ জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করেছে এবং তাতে যা আছে সে অনুযায়ী আমল করেছে, তা হলে তার মা-বাবাকে হাশরের মাঠে একটি নূরের মুকুট পরানো হবে। যদি সূর্য তোমাদের ঘরে প্রবেশ করত, তা হলে ওই সূর্যের আলোর চেয়ে ওই মুকুটের আলো বেশি উজ্জ্বল হবে। এখন তোমরা চিন্তা করো, যে ব্যক্তি কোরআনের নির্দেশ অনুসারে আমল করে, তার মর্যাদা ও অবস্থান কত উত্তম হবে?’ (আবু দাউদ : ১৪৫৩)
যারা কোরআন তেলাওয়াতকারী তাদেরকে আল্লাহর পরিবারভুক্ত বলে বিভিন্ন হাদিসে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। হাশরের মাঠে আল্লাহ তাদের সুপারিশ কবুল করবেন। কোরআন তেলাওয়াতকারীর মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনকে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। হজরত আলি ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পাঠ করে এবং তা হিফজ অর্থাৎ মুখস্থ করে অতঃপর কোরআন যা হালাল করেছে সে নিজের জন্য তা হালাল করে এবং কোরআন যা হারাম করেছে সে নিজের জন্য তা হারাম করে, তবে কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং নিজ পরিবারের এমন দশজনের জন্য তার সুপারিশ কবুল করবেন, যাদের জন্য জাহান্নাম আবশ্যক হয়ে গিয়েছিল।’ (তিরমিজি : ৫/২৯০৫)