আসলে কি পরিশ্রমই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে, নাকি অন্য কিছু?

ভাগ্য কি? অনেকেরই মনে এমন প্রশ্ন জাগে। জ্ঞান প্রকাশ্যের আকাঙ্খা যাদের মধ্যে প্রবল তাদের বিতর্কের একটা প্রিয় বিষয় হচ্ছে ভাগ্য। অবশ্য শুধু পন্ডিত নয়, ভাগ্য নিয়ে সাধারণ মানুষও চিন্তাভাবনা করে। ভাগ্য অদৃশ্য জগতের ব্যাপার। অতীতকে আমরা দেখি কিন্তু ভবিষ্যতে কী হবে তা কেউ জানে না। আর এই ভবিষ্যৎই ভাগ্য।

অনেকেই আবার বলবেন, ‘যেমন কর্ম, তেমন ফল’। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলে তাই? এক্ষেত্রে বেশ কিছু উদাহরণ দেয়া যায়। যেমন: কোন ছাত্র যে খুব বেশি পড়লেই পরীক্ষায় ফলাফল ভালো হবে তা কিন্তু না। এক্ষেত্রে পরীক্ষায় প্রশ্ন কমন না ও পড়তে পারে আবার পরীক্ষার দিন ওই ছাত্র অসুস্থও হয়ে যেতে পারে।

এ বিষয়ে কবি আলেকজান্ডার পোপ একটা কথা বলেছিলেন যা অনেকটা এই রকম যে, একটা ভেড়া যদি জানত আজ তার জীবনের শেষ দিন, সে কি লাফিয়ে লাফিয়ে খেলা করতে পারত? সেকি তার এত দিনের পালক কিন্তু ভবিষ্যত হন্তারকের হাত থেকে খাবার খেতে পারত? আসলে আল্লাহ অনেক দয়া করে ভাগ্যকে আমাদের সামনে অজানা রেখেছেন নয়ত আমরা একটি দিনও চলতে পারতামনা।

অনেকে আবার বলতে পারেন ভাগ্যই যদি সব হয় তাহলে আমাদের আবার কাজ করার দরকার কি? এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমরা কাজ কর, ফল আমি দিব। আপনি যেটা করবেন বা বেছে নিবেন, সেটার ফলাফল নির্ধারিত আছে। কিন্তু আপনি কোনটা করবেন সেটা সম্পূর্ন আপনার ইচ্ছা।

আল্লাহ এখানে আপনাকে কোন জোর করেন না। আপনি কি করলে কি হবে এটা আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন কিন্তু আপনি কি করবেন সেটা আপনার ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। অতএব ভাগ্য বলতে আমরা যে ভবিষ্যৎ বুঝে থাকি সেটা অবশ্যই পূর্ব নির্ধারিত। কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত অনেক ভবিষ্যতের মধ্যে, একটি আমরা নিজেরাই বেছে নেই। আমরা নিজেরাই যখন বেছে নিচ্ছি তখন এর দোষ, গুন, প্রাপ্তি, ক্ষতি সবই আমাদের। এর দায়বদ্ধতা সম্পূর্ণ আমাদের। আপনি কি করবেন সেটা নির্ধারিত নয়। আপনি কি করলে কি হবে সেটা নির্ধারিত।

আল্লাহ ইচ্ছেশক্তি দেয়ার সাথে সাথে দু ধরণের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন,ভালো এবং খারাপ। আল্লাহ মানুষকে আদেশ করেছেন সে যেন ভাল পথে চলে আর খারাপ পথে না চলে। কিন্তু মানুষ কোন পথে চলবে সেটা আল্লাহ মানুষের উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি মানুষকে দুই পথেই চলার ক্ষমতা দিয়েছেন, ভালো কাজ করার শক্তি দিয়েছেন তেমনি খারাপ কাজ করারও শক্তি দিয়েছেন। কিন্ত তিনি মানুষকে তার পছন্দ-অপছন্দের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। যে ভালো পথ বেছে নেবে, ভালো কাজ করবে তাকে আল্লাহ পুরস্কার দিবেন। আর যে খারাপ কাজ করবে, খারাপ পথে চলবে তাকে তিনি সেজন্য শাস্তি দেবেন। আল্লাহ যদিও পছন্দ করেন না যে মানুষ খারাপ কাজ করুক, তবুও যেহেতু তিনি মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি দিয়েছেন তাই তিনি সেই অপছন্দনীয় কাজটি করার সামর্থ্য এবং প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছেন। আল্লাহ জানেন মানুষ কী করবে, কিন্তু মানুষ নিজের ইচ্ছেতেই সেটা করবে।

এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দেয়া যায়, একজন ছাত্র একেবারেই পড়াশোনা করে না। তার শিক্ষক তার পড়াশোনার অবস্থা দেখে বললেন যে, এই ছেলে পরীক্ষায় খারাপ করবে। ফল বের হবার পর দেখা গেল সত্যি সত্যি সে পরীক্ষায় ফেল করেছে। তাহলে পরীক্ষায় খারাপ করার জন্য কি সেই শিক্ষক দায়ী না সেই ছাত্র দায়ী? অবশ্যই সে ছাত্র দায়ী। ঠিক সেরকম আল্লাহ জানেন যে কে ভাল কাজ করবে আর কে খারাপ কাজ করবে। কিন্তু যেহেতু তিনি কাউকে বাধ্য করেননি তাই যে যার নিজের কাজের জন্য দায়ী থাকবে।

ভাগ্য আগে নির্ধারিত থাকলেও আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করে ভাগ্য পরিবর্তন করেন। আপনি আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইলেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সেটা অবশ্যই দিবেন। সেটা যদি আল্লাহ আপনাকে না দেন তবে তার দুটি মূল কারণ থাকতে পারে। প্রথম কারণ হলো: আপনার চাওয়াটা ঠিক ভাবে হয়নি। চাওয়াটা দায় সারা গোচের হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ: যেই জিনিসটা আপনি চাইছেন, তা আপনার জন্য সুফল নয় বরং দুর্ভোগ বয়ে আনবে। তা না হলে আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ন বিশ্বাস স্থাপন করে কোন কিছু চাইলে আল্লাহ সেটা অবশ্যই দিবেন।

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৩ ঘণ্টা, ২৩ অক্টোবর,  ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/ডিএ

Scroll to Top