ঈমান আনার পর নামাজ হলো একজন মুমিন মুসলমানের সর্বপ্রথম ইবাদত। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম হবে নামাজের হিসাব। আল্লাহ কোরআনুল কারিমে নামাজের কথা উল্লেখ করেছেন ৮২ বার। নিশ্চয়ই নামাজ বেহেশতের চাবি। ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ কুফরির সমতুল্য। আর নামাজ অস্বীকারকারী কাফির।
বিনা কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ কাজা করলে তার জন্য ২ কোটি ৮৮ লাখ বছর জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। অনিচ্ছাকৃত, ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে ওই নামাজ পরে আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়।
আপনার জীবনে যদি কাজা নামাজ থেকে থাকে তাহলে সেই কাজা নামাজ আগে আদায় করবেন। এটা আপনার জিম্মাদারি। নফল আপনার জিম্মাদারি না, এটা অতিরিক্ত আমল।
এখন প্রশ্ন হলো- নামাজ আদায় করার বিষয়ে। এটা খুবই সহজ বিষয়। যদি আপনার জানা থাকে ঠিক কত ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়েছে, তবে সে হিসেবে পড়বেন। আর যদি জানা না থাকে তবে অনুমান করবেন। সাধারণত বাংলাদেশে এগারো-বারোতে ছেলে-মেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। এখন আপনার বয়স যদি বিশ হয় তবে এগারো থেকে ধরে নিয়ে দশবছরের নামাজ কাজা করতে হবে।
কিন্তু প্রতি মাসে নারীরা ছুটি পায় তিন থেকে ১০দিন পর্যন্ত। বেশিরভাগ নারীর অভ্যাস থাকে সাতদিন। নারীরা সে অনুযায়ী হিসাব করবেন।
এই কাজা নামাজ আপনি দুভাবে আদায় করতে পারেন।
এক. প্রতিদিনের ফরজ নামাজের সঙ্গে এক অথবা দুদিনের করে কাজা নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেকবার নিয়ত করবেন ‘আমার জিম্মায় যত ফজরের নামাজ কাজা আছে, তার অনাদায়কৃত প্রথম ফজরের কাজা আদায় করছি।’ এভাবে প্রতিদিন উমরি কাজা আদায় করতে পারেন। প্রত্যেকবার একই নিয়ত করবেন, কারণ আপনি বলছেন- ‘অনাদায়কৃত।’ যেটা আদায় করছেন, সেটা তো আদায়ই হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথম অনাদায়কৃত বলা।
কিন্তু এই পদ্ধতিতে আদায় করা কঠিন। তালগোল পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে হিসেব দ্বিতীয় পদ্ধতি একটু সহজ।
প্রথমে এক বছরের শুধু ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করুন। নিয়তের ক্ষেত্রে বলবেন, ‘আমার জীবনে কাজা হওয়া প্রথম ফজরের কাজা আদায় করছি।\’
অর্থাৎ আপনি প্রতি ওয়াক্তের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত ফজর, জোহরের সময় আরও পাঁচ ওয়াক্ত ফজর, তারপর এশার পর অথবা তাহাজ্জুদের সময় আরও পাঁচ ওয়াক্ত ফজর পড়েন, তবে দিনে পড়ছেন ১৫ দিনের নামাজ। এভাবে দ্রুত আপনার হিসাবে থাকা কাজা পূরণ হয়ে যাবে। এরপরের মাসে জোহরের এক বছর আদায় করে নিন।
প্রতিদিন যে কয় রাকাত পড়বেন, সঙ্গে সঙ্গে কাগজে লিখে ফেলুন। যেন কোনোদিন বাদ পড়লে হিসেব মনে থাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- সব মিলিয়ে কত রাকাত কাজা হয়েছে, সেটা অসিয়তনামায় লিখে রাখুন এবং কাছের কাউকে জানিয়ে রাখুন। যেন আপনি হঠাৎ মারা গেলে আপনার সম্পদ থাকলে ফিদইয়া দেওয়া যায়। যদি ফিদইয়া দেওয়ার মতো সম্পদ না থাকে তবে যেহেতু আপনি কাজা শুরু করেছেন, আশা করা যায়, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
কাজা নামাজ আদায় করতে হয় নাকি তওবা করলে হয়, এটা নিয়ে কেউ কেউ তর্ক করেন। এখানে তর্কের কিছু নাই। কাজা আদায় করতে হবে।
নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করা মারাত্মক পাপের কাজ। তার পরও কাজা হলে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে নেবেন। ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস, ‘ফরজ নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করবে না। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তা পরিত্যাগ করে তার ওপর থেকে আল্লাহতায়ালার দায়িত্ব ওঠে যায়।