রহমাতুল্লিল আলামিন, সাইয়্যেদুল কাউনাইন মুহাম্মদ (সা.)। তাঁকে সৃষ্টি না করলে এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করা হতো না। এই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র কিছুই সৃষ্টি করা হতো না। তিনি সব জাহানের মালিক মহান আল্লাহর পরম বন্ধু। যিনি আসমান, জমিন, গ্রহ-নক্ষত্রসহ আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর প্রিয় বন্ধুকে কিভাবে সৃষ্টি করেছেন, তিনি দেখতে কেমন ছিলেন, প্রতিটি মুমিনেরই তা জানতে ইচ্ছা করে। আজকে আমরা হাদিসের আলোকেই জানার চেষ্টা করব যে আমাদের প্রিয় নবীর দৈহিক গঠন কেমন ছিল।
চেহারা: প্রিয় নবী (সা.) ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর মানুষ। যাঁর সৌন্দর্যের কাছে আকাশের চাঁদও হার মানত। আবদুল্লাহ ইবনে কাআব (রহ.) বলেন, ‘আমি আমার পিতা কাআব ইবনে মালিক (রা.)-কে তাঁর তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে সালাম করলাম, খুশি ও আনন্দে তাঁর চেহারা ঝলমল করে উঠল। তাঁর চেহারা আনন্দে এমনই টগবগ করত, মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরা। তাঁর মুখমণ্ডলের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে পারতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৬)। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর দুই পা ছিল মাংসপূর্ণ। চেহারা ছিল সুন্দর। আমি তাঁর পরে তাঁর মতো কাউকে দেখিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯০৯)
যে নবীর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর চেহারায় মিল ছিল
রাসুল (সা.)-এর চেহারা মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে মিল ছিল।
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমার সম্মুখে নবীদের হাজির করা হয়। সে সময় মুসা (আ.)-কে আমি দেখলাম, তিনি যেন শানুআহ গোত্রের একজন পুরুষ। আমি ঈসা ইবনে মারিয়াম (আ.)-কেও লক্ষ করেছি, আমার দেখা লোকদের মাঝে তিনি উরওয়াহ ইবনে মাসউদের মতো।
আমি ইবরাহিম (আ.)-কেও লক্ষ করেছি, আমার দেখা লোকদের মাঝে তিনি তোমাদের বন্ধুর মতো, অর্থাৎ আমার মতো। জিবরাঈল (আ.)-কেও আমি লক্ষ করেছি, তিনি আমার দেখা লোকদের মাঝে দিহয়া ইবনে খলিফা আল ক্বালবির মতো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৯)
উচ্চতা: উচ্চতার দিক থেকে তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের। বেশি লম্বাও না, আবার একদম খাটো না। যে উচ্চতা ও শারীরিক গঠন একজন মানুষকে আকর্ষণীয় করে তোলে, তিনি ছিলেন ঠিক সেই গঠনেরই। বারাআ ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন মাঝারি গড়নের। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫১)
চোখ: তাঁর চোখ দুটি ছিল অত্যন্ত সুন্দর। একজন বীরপুরুষের চোখ যেমন হওয়া প্রয়োজন ঠিক তেমনই। তাঁর চোখের শুভ্রাংশের রক্তিমতা তাঁর চোখের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর মুখ ছিল বেশ দীর্ঘ (প্রশস্ত), চোখ দুটি ছিল লাল (শুভ্রাংশে রক্তিমতা ছিল) এবং পায়ের জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৪৬)
দাড়ি: জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল এবং দাড়ির সামনের অংশ সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন তেল দিতেন (সাদা) চুল তখন দেখা যেত না, আর যখন চুল অগোছালো হতো তখন দেখা যেত। তাঁর দাড়ি প্রচুর ঘন ছিল। জনৈক লোক বলল, তাঁর চেহারা ছিল তরবারির মতো। জাবির (রা.) বলেন, না, তাঁর চেহারা ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মতো (উজ্জ্বল) গোলাকার। আমি তাঁর পিঠের উপরিভাগে কবুতরের ডিমসদৃশ নবুয়তের মোহর দেখেছি। এটির রং ছিল তাঁর গায়ের রঙের মতো। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৭৮)
হাত: তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুন্দর দেহের অধিকারী। তাঁর হাতগুলো ছিল গোশতে ভরপুর। সুঠাম বাহু ও হাত পাওয়ার জন্য মানুষকে যেমন বছরের পর বছর জিম করতে হয়, নবী (সা.) সৃষ্টিগতভাবেই ছিলেন এর চেয়ে বেশি সুন্দর দেহের অধিকারী। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর হাত গোশতে পূর্ণ ছিল। তাঁর পরে আমি কোনো লোককে এমন দেখিনি। আর রাসুল (সা.)-এর চুল ছিল মাঝারি ধরনের, অধিক কোঁকড়ানোও না, অধিক সোজাও না। (বুখারি, হাদিস : ৫৯০৬)
তাঁর হাতের পেশিগুলো দেখে শক্তপোক্ত মনে হলেও সেগুলো ছিল অত্যন্ত নরম। নবীজির সেবক আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ছিলেন শুভ্র উজ্জ্বল বর্ণের। তাঁর ঘাম যেন মুক্তার মতো। তিনি চলার সময় সম্মুখপানে ঝুঁকে চলতেন। আমি নরম কাপড় বা রেশমকেও তাঁর হাতের তালুর মতো নরম পাইনি এবং মিশক ও আম্বরের মধ্যেও রাসুল (সা.)-এর শরীরের চেয়ে অধিক সুগন্ধ পাইনি। (মুসলিম, হাদিস : ৫৯৪৮)
পা: হাতের মতো তাঁর পাও ছিল সুন্দর। তাঁর মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো দেহই যেমনটা মানানসই হওয়া প্রয়োজন, ঠিক তেমনই ছিল। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর মাথা ও দুই পা ছিল মাংসপূর্ণ। তাঁর আগে ও তাঁর পরে আমি তাঁর মতো অন্য (কাউকে অধিক সুন্দর) দেখিনি। তাঁর হাতের তালু ছিল চওড়া। (বুখারি, হাদিস : ৫৯০৭)