মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে। আমি (আল্লাহ) তা গোপন রাখতে চাই, যাতে প্রত্যেকে নিজ কর্ম অনুযায়ী ফল লাভ করতে পারে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১৫)
তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, মুসা (আ.)-কে এক আল্লাহর ইবাদত করতে এবং আল্লাহর স্মরণে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আলোচ্য আয়াতে পরকালের বিশ্বাস সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী। কিয়ামত অবশ্যই কায়েম হবে। তবে বিশেষ হিকমতে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় গোপন রাখা হয়েছে।
এ আয়াতে কিয়ামত আগমনের রহস্য বর্ণনা করা হয়েছে। রহস্য হলো, দুনিয়া চূড়ান্ত প্রতিদানের জায়গা নয়। এখানে কেউ সৎ ও অসৎকর্মের পুরোপুরি প্রতিফল লাভ করে না। কেউ কিছু ফল পেলেও তা তার কর্মের সম্পূর্ণ ফল লাভ নয়। চূড়ান্ত প্রতিফল দুনিয়ায় দেওয়া সম্ভব নয়। যেমন—একাধিক হত্যার আসামিকে একবারই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায়। অথচ প্রতিটি হত্যার দায়ে সে প্রতিবার মৃত্যুদণ্ডের অধিকারী হয়। সুতরাং গোটা জীবনের সব পাপ ও পুণ্যের প্রতিফল দেওয়ার জন্য এমন দিনক্ষণ আসা অপরিহার্য, যখন প্রত্যেককে সৎ ও অসৎকর্মের প্রতিদান ও প্রতিফল পুরোপুরি দেওয়া যায়।
কিয়ামত ও মৃত্যুর সময়-তারিখ গোপন রাখার অন্যতম রহস্য হলো, মানুষ কর্ম-প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকুক এবং ইবাদতময় জীবন গড়ে তুলুক—কিছুতেই মৃত্যু ও কিয়ামত সম্পর্কে গাফিল না হোক।
কোনো কিছু অজানা ও রহস্যাবৃত থাকা জীবনের গতি স্বাভাবিক রাখে। জীবনের সব রহস্য খুলে গেলে স্থিরতা ও সাবলীলতা ব্যাহত হয়। মানুষের স্বভাব হলো, রহস্যাবৃত বিষয়ের পেছনে দৌড়ে, ভীত হয়, আশাবাদী হয়, শেখে এবং রহস্য উম্মোচনের চেষ্টা করে। এর পেছনে অর্থ, সময় ও শক্তি ব্যয় করে। ঠিক তেমনি কিয়ামতের সময় গোপন রাখার সঙ্গে মানুষের জীবন গঠনের সম্পর্ক আছে। কিয়ামতের সময় প্রকাশ করে দিলে ইবাদতের নির্দেশ ও গুনাহমুক্ত থাকার উদ্দেশ্য ব্যাহত হতো। বিষয়টি গোপন থাকার ফলে আল্লাহর প্রিয় বান্দা ধারাবাহিকভাবে ইবাদত করতে পারে এবং পাপীরা তাওবা করে ফিরে আসার অবকাশ পায়। যেকোনো সময় কিয়ামত হতে পারে—এই ভয়ে ইবাদতকারী ইবাদতে লিপ্ত থাকে এবং পাপী পাপ ত্যাগের তাগিদ অনুভব করে।
কিয়ামতের বিষয়টি মানুষের মৃত্যুর মতো। মৃত্যু নিশ্চিত—এটা সবাই জানে। কিন্তু এর সময় ও দিনক্ষণ কেউ জানে না। অনুরূপ কিয়ামত নিশ্চিত—এর দিনক্ষণ কেউ জানে না। মৃত্যুর সময় জানা নেই বলেই মুমিন ব্যক্তি যেকোনো অবস্থাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে আমৃত্যু ইবাদত করার তাগিদ অনুভব করে।
কেননা ইবাদত ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় মৃত্যু এসে গেলে তার অশুভ পরিণতি হবে। ঠিক তেমনি মৃত্যুর সময় না জানার কারণে পাপী ব্যক্তি পাপ ছেড়ে দ্রুত ফিরে আসার সুযোগ পায়। কেননা যেকোনো সময় মৃত্যু হলে তার মহাসর্বনাশ হয়ে যাবে। আর ব্যক্তির মৃত্যু ব্যক্তির জন্য একধরনের কিয়ামত। হাদিসে এসেছে, ‘যে মৃত্যুবরণ করেছে, তার কিয়ামত কায়েম হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার কিয়ামতের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।’ ঠিক তেমনি কিয়ামতের বিষয়টি গোপন রাখা একইসঙ্গে সুযোগ ও সতর্কবার্তা।