দিনাজপুরের সব কয়টি উপজেলাতেই এবারে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে রয়েছে লিচুর বাগান। এছাড়া বাসা বাড়িগুলোতেও রয়েছে লিচুর গাছ। ওইসব গাছে শোভা পাচ্ছে লাল টস-টসে পাকা লিচু।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মধু মাসে লিচু সমারোহ ও অর্জিত লিচুর বিষয় নিয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, লিচুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে দিন-দিন লিচু চাষ বাড়ছে। প্রতি বছরই ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে লিচু চাষের জমির পরিমাণ। এখন সারাদেশে কম বেশি লিচু চাষ হলেও দিনাজপুরের লিচুর কদর আলাদা। রসালো ফল লিচু অনেকের কাছে ‘রসগোল্লা’ হিসেবে পরিচিত। এবার মধুমাসের ফল লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রতিবছর দিনাজপুরের লিচু সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এবার পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে লিচু রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। লিচুর ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই জেলাতে লিচু চাষ দিন-দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও প্রকৃতিক কোনো দুর্যোগ এখন পর্যন্ত না হওয়ায় দিনাজপুরে রেকর্ড পরিমাণ লিচুর ফলন অর্জিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের লিচু নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান, এবার জেলায় ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সাইদুর রহমান জানান, চলতি বছরে দিনাজপুর জেলায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে লিচু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর উৎপাদন অর্জিত হয়ে মোট ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ অর্জিত হয়েছে। দিনাজপুরের লিচু সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী এর চাহিদা রয়েছে। এবার দিনাজপুরের লিচু পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোতে রফতানি করা হবে। সূত্র জানায়, দিনাজপুরের লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদানা, বোম্বাই ও মাদ্রাজি, কাঠালী উল্লেখয্যেগ্য। দিনাজপুরের যেসব স্থানে লিচু চাষ হয় তার মধ্যে সদর, বিরল, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা উপজেলা বিখ্যাত।
সদর উপজেলা লিচু চাষি মতিউর রহমান জানান, লিচুর ফুল আসা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই পরিচর্যা শুরু করে দিতে হয়। নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দিয়ে লিচুর পরিপক্কতা আশায় লিচু পাকা শুরু করেছে। বর্তমান সময়ে জ্যেষ্ঠ মাসের প্রথমেই বোম্বে ও মাদ্রাজি লিচু বাজারে এসেছে। দেশী প্রজাতির এই লিচু প্রতি’শ ১৫০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বেদানা লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। গত দুইবছর সারা বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থাকায় এবং পবিত্র রমজান মাস হওয়ায় দিনাজপুরের লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীরা এখান থেকে বাইরে পাঠাতে না পারায় লিচুর মন্দা ভাব ছিল।
এবার লিচু চাষী ও ব্যবসায়ীদের আশা করোনা সংক্রমণ সেরকম না থাকায় এবং রমজান মাসও অতিবাহিত হওয়ায় লিচুর ভাল মূল্য পাওয়ার আশায় লিচু বাগানের পরিচর্যা ও লিচু সংরক্ষণে দিন অতিবাহিত করছেন বাগান মালিকরা।
লিচু চাষী আমজাদ হোসেন বলেন, তার সাড়ে ৩ একর জমির উপর ৩টি লিচু বাগান রয়েছে। তার বাগান সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ও মাসিমপুর গ্রামে। এ ২টি গ্রামে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী বেদানা লিচুর সমারোহ হয়ে থাকে। এই ৩টি বাগানের মধ্যে ২ একর ৫০ শতকের ২টি বাগান সাড়ে ৬ লাখ টাকায় ঢাকার সাভার এলাকার এক ব্যবসায়ীর কাছে আগাম লিচু বিক্রি করেছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যেই এ বাগানগুলো থেকে ঐতিহ্যবাহী বেদেনা লিচু ওই ব্যবসায়ী পাড়তে শুরু করবে। অনেক সংস্থার লোকজন এবাগানে লিচু কিনতে ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে। তিনি বলেন, ভাল বেদানা লিচু বাগান থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ভাল মূল্যে লিচু ক্রয় করে নিয়ে যায়। এবারও সেভাবেই আগাম লিচু ক্রয় করতে ওইসব ব্যক্তিরা যোগাযোগ করে আগাম বায়না দিয়েছেন। তার ওই দুটি বাগান থেকেই এবারে ১০ লাখ টাকার অধিক লিচু বিক্রি হবে।
বিভিন্ন লিচু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত বছরগুলোর তুলনা এবারে দিনাজপুরের লিচু ফলন অনেক বৃদ্ধি পাবে। দেশের চাহিদা অনুযায়ী লিচু পুরণ হয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা যাবে বলে লিচু চাষীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।