ঠাকুরগাঁওয়ে করোনাকালে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে বাল্যবিবাহের সংখ্যা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রুমি আক্তারের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরার। তবে স্কুলের গণ্ডি না পেরুতেই বসতে হয়েছে বিয়ের পিড়িতে। বন্ধ পড়াশোনা। করোনা মহামারীতে কমেছে পরিবারের উপার্জন। তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় মেয়ের বিয়ে দেন বাবা-মা। তবে, যৌতুক দিতে না পারায় ৬ মাস না যেতেই রুমিকে ফিরতে হয়েছে বাবার বাড়িতে।
ঠাকুরগাঁয়ের রুমির মতো অনেক শিক্ষার্থীই করোনাকালে বাল্যবিয়ের শিকার। যে বয়সটা পড়ালেখা আর খেলাধুলার, সেই সময়টায় তাদের টানতে হচ্ছে সংসারের ঘানি।
বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েরা জানান, বিয়েতে মত না থাকলেও পরিবারের চাপে বিয়ে করতে হচ্ছে তাদের। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় বিয়ের চাপও বাড়ছে। বেশিরভাগেরই বিয়ের পর হতে হচ্ছে শরীরীক, মানসিক নির্যাতনের শিকার।
করোনাকালে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে বাল্যবিবাহের সংখ্যা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেল-জরিমানার পরও এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং পরিবারের আয় কমে যাওয়াকে বাল্যবিবাহের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অভিভাবক, শিক্ষক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ঠাকুরগাঁওয়ের খালেদা জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রায় ৫০ শতাংশ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। গত দুই দিনে আমাদের পাঁচ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। যারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
অভিভাবকরা বলছেন, সংসারে অভাব-অনটন, স্কুল বন্ধসহ পারিপার্শ্বিক নানা কারণে অপ্রাপ্ত বয়সে সন্তানের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বাল্য বিবাহ বন্ধে জেলায় কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
মানব কল্যাণ পরিষদ ঠাকুরগাঁওয়ের কর্মকর্তা রবিউল আলম বলেন, অনেক শিক্ষার্থীরই এই করোনাকালে বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদেরকে এলাকায় এলাকায় বাল্যবিবাহের যে কুফল সেগুলো প্রচার করতে হবে। মানসিক পরিবর্তন আনতে হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। আর বাল্যবিবাহ ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ঠাকুরগাঁও সদর ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ছাত্রছাত্রীরা যখন বাসায় অবস্থান করছে তখন আমরা মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের একতা হিড়িক লক্ষ্য করছি। এই বাল্যবিবাহ বন্ধে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি।
করোনাকালে ঠাকুরগাঁওয়ে বাল্য বিবাহ বৃদ্ধির কথা স্বীকার করলেও প্রশাসন সেই সংখ্যা কত তা জানাতে পারেনি।