দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র ভারত সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহীতে গত ১১ জুন থেকে চলছে ‘বিশেষ লকডাউন’। এরপরও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মৃত্যুর সংখ্যা কমছে না।
একই সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। রাজশাহীতে প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের মৃত্যু হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজন করোনা পজেটিভ ছিলেন। অন্য ৯ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় হাসপাতালের আরও একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে কোভিড ওয়ার্ডে রূপান্তর করার কাজ চলছে। করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটিতে এখন অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের কাজ চলছে।
রোববার (২০ জুন) সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
রামেক হাসপাতালের মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে শনিবার (১৯ জুন) সকাল ৬টা থেকে রোববার (২০ জুন) সকাল ৬টার মধ্যে বিভিন্ন সময় এই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে রাজশাহী জেলার ৭ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ২ জন ও নওগাঁ জেলার ১ জন রয়েছেন। এ নিয়ে চলতি মাসের ২০ দিনে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ২০ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেলেন ২০৩ জন।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে নতুনভাবে আরও ৫৪ জন রোগী করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৭৭ জন। আগের দিন ভর্তি ছিলেন ৩৬৫ জন। চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা আবারও বেড়েছে। অথচ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর পরও রয়েছে ৩০৯টি। আর আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ২০টি। এই ২০টি শয্যার বিপরীতে গড়ে ৭০ জন আইসিইউর জন্য অপেক্ষায় থাকছেন।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ চলাকালে রামেক হাসপাতালে গড়ে সর্বোচ্চ ১৩৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন থাকতেন। গত রোজার ঈদের আগে কমে সেটি ৭১ জনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ঈদের পর এখন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। তাই একের পর এক সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হচ্ছে। কিন্তু জায়গা না থাকায় আগামী ৫-৬ মাসেও অতি জরুরি আইসিইউর শয্যা বাড়ানো সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আইসিইউর জন্য বাড়তি সুবিধাসম্পন্ন জায়গা দরকার। সেটা হাসপাতালে এই মুহূর্তে আর নেই। প্রথমে করোনার জন্য ১০টি আইসিইউ করা হলেও পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে ২০টি করা হয়েছে। আর বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় আরও একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে কোভিড ওয়ার্ডে রূপান্তরের কাজ চলছে। করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটিতে এখন অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের কাজ চলছে।
হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি শয্যা আছে। সেখানে বারান্দায় বাড়তি আরও ১২টি শয্যার ব্যবস্থা করা যাবে। ফলে সেখানে মোট ৪৮ জনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে। দু’একদিনের মধ্যেই ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইনের কাজ শেষ হবে। এরপর সেখানেও করোনা রোগীদের রাখা হবে। বর্তমানে হাসপাতালের ১, ৩, ১৫, ১৬, ২২, ২৫, ২৭, ২৯, ৩০ এবং ৩৯, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা রোগী রাখা হয়। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ২০টি ও কেবিনে ১৫টি করোনা ডেডিকেটেড শয্যা আছে। সবমিলিয়ে মোট শয্যার সংখ্যা ৩০৯টি। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটি যুক্ত হলে মোট শয্যা সংখ্যা বেড়ে ৩৫৭টিতে দাঁড়াবে বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।