‘আমরা দুজন সুইসাইড করবো, দুজনের আজই শেষ দিন’

নাটোরের সিংড়ায় ইমন হোসেন (১৩) ও নিশাত হোসেন (১৪) নামে স্কুল ছাত্র দুই বন্ধু একসাথে আত্মহত্যা করেছে। সিংড়া উপজেলার শতভাগ শিক্ষা অর্জনকারী গ্রাম হুলহুলিয়া গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে তারা এক সাথে গ্যাস ট্যাবলেট খায়। অসুস্থ অবস্থায় ইমন সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং নিশাত বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এর আগে তারা স্কুলে গিয়ে তাদের সহপাঠীদের বলে আজ তারা দুজনই সুইসাইড করবে। তাদের দুজনের শেষ দিন আজ।

এসব কথা বলে তারা স্কুল থেকে বের হয়ে যায়। এর পরই তাদের আত্মহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে। নিহত ইমন হোসেন তাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আমিন হোসেনের এবং নিশাত চৌগ্রাম ইউনিয়নের হুলহুলিয়া গ্রামের মৃত বকুল প্রাং এর ছেলে। দুজনেই হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র।

পুলিশ ও সহপাঠি সুত্রে জানাযায়,দুই বন্ধু ইমন ও নিশাত প্রতিদিনের মত তারা রোববার স্কুলে যায়। তবে তারা এদিন পোশাক পড়ে স্কুলে যায়নি। গেঞ্জি পড়ে গিয়েছিল। ইমন হুলহুরিয়া গ্রামে তার খালার বাসায় থেকে পড়াশোনা করছে। স্কুলে কিছুক্ষন সহপাঠিদের সাথে সময় কাটিয়ে তারা আত্মহত্যা করার কথা বলে স্কুল থেকে বের হয়ে আসে। এর পর তাদের আত্মহত্যা করা চেষ্টার খবর স্কুলে পৌঁছে।

তারা স্কুল থেকে বের হয়ে গিয়ে হুলহুলিয়া প্রামানিক পাড়া এলাকায় একটি পুকুর পাড়ে তারা দুজনই কীটনাশক গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। নিশাত সেখান থেকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দ’জনার মৃত্যু হয়।

পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, ইমনের বাড়ি সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে। হুলহুলিয়া গ্রামে তার খালার বাসায় থেকে সে হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। এর আগে সে সিংড়া পৌর শহরের দমদমা পাইলট স্কুল ও কলেজ এবং নিংগইন জোড়মল্লিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। আর নিশাত হুলহুলিয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তারা দুজন বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলো। নিয়মিত স্কুলে যেত। তবে নিশাত একটু বখাটে স্বভাবের ছিল। তাদের কারো কাছে স্মার্ট ফোন ছিল না। কি কারনে এমন ঘটনা ঘটলো তা রহস্যজনক।

হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি লাইব্রেরিয়ান তৌফিক পরশ জানান, ইমন ও নিশাত হুলহুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র। ইমনের রোল ৩০ ও নিশাতের রোল ২৬। সকালে দুজন স্কুলে আসে। এসে তাদের সহপাঠীদের বলে আজ আমরা দুজন সুইসাইড করবো। দুজনের আজ শেষ দিন এসব বলে তারা স্কুল থেকে বের হয়ে যায়।

তারপর যথারীতি স্কুল চলাকালিন সময়ে খবর আসে স্থানীয় হুলহুলিয়া প্রামানিক পাড়া এলাকায় একটি পুকুর পাড়ে তারা দুজনই কীটনাশক গ্যাস ট্যাবলেট খেয়েছে। খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় দু’জনেই পুকুর ধারে পড়ে আছে।

এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের সিংড়া হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং নিশাতকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে সেখানে নিশাতেরও মৃত্যু হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল বারিক জানান, ওই দুই শিক্ষার্থী রোববার ১০টা ৪০ মিনিটে পোশাক ছাড়া গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় তারা স্কুলে আসে। শ্রেণি শিক্ষক ইয়াকুব আলী তাদেরকে অস্বাভাবিক অবস্থায় ক্লাসে প্রবেশ করতে দেখে প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিতে বলেন। কিন্তু তারা প্রধান শিক্ষকের অনুমতি না নিয়ে স্কুল ত্যাগ করে। কিছুক্ষণ পর তাদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের আত্মহত্যার কারন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ১৬ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ