ইউরোপের দেশ গ্রিসে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাংলা নববর্ষ-১৪৩১ উদযাপন করা হয়েছে। এথেন্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে দূতাবাস প্রাঙ্গণে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলাদেশি খাবার উৎসবের সাথে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা উদযাপন করা হয়।
মেলায় বাংলাদেশি নারী-পুরুষ ও শিশুরা লোকজ ও বৈশাখী পোষাকে সজ্জিত ছিলেন। হাতে মেহেদি ও বাঙালি পোশাকের সাজে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বিদেশি নাগরিকরাও।
গত শনিবার সকাল থেকেই এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে বৈশাখী আলপনা, নববর্ষের সাজসজ্জাসহ বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত করা হয়। নারী-পুরুষ সবাই বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত হন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশ কয়েকটি স্টলে বাংলাদেশি খাবার, শাড়ি ও অলংকার সামগ্রী এবং আলপনা সহকারে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলেন।
বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সদস্য এবং শিশু-কিশোররা বৈশাখী ও লোকজ সংগীত, কবিতা, নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশন করেন। শত শত নারী-পুরুষের আগমনে কলকাকলিতে মুখরিত হয় দূতাবাস এবং সৃষ্টি হয় এক বর্ণিল মনোরম পরিবেশের। মেলায় আগমনকারীরা বিভিন্ন স্টলে বাংলাদেশি পণ্য দর্শন এবং বাংলাদেশি খাবারও আস্বাদন করেন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি, গ্রামীণ বাংলার বৈশাখী আবহে স্টলসহ দূতাবাস প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে এক টুকরো বাংলাদেশ।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে নিয়ে নতুন বছরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা করেন। বিপুল উৎসাহে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে এ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে এথেন্সস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস এর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘বাংলা নববর্ষের উৎসব বাঙালির প্রাণের উৎসব, সম্প্রতির উৎসব এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির উৎসব। বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে প্রবাসীদের সাথে নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈশাখী উৎসবে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি সবাই সম্প্রতির সাথে এবং সৌহার্দের সাথে উৎসব এক সাথে উদযাপন করছি এবং এই উৎসব আমরা সবাইকে সারা বছর এক সাথে থাকার ও এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা জোগাবে।’
শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিল্পী এবং শিশু-কিশোররা বৈশাখী ও লোকজ সংগীত, নৃত্য ইত্যাদি পরিবেশনের মাধ্যমে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের বর্তমান ও সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী এবং আঞ্চলিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশি বন্ধুদের আমন্ত্রণে অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন গ্রিক নাগরিক উপস্থিত হন। এর মধ্যে দুইজন বাঙালি সাজে সজ্জিত হয়ে আসেন। তারা পাঞ্জাবি ও হাতে মেহেদি দিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হন।
এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপের শুরুতেই ‘কেমন আছেন ভাই’ বলে বাংলা ভাষায় সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তারা বলেন, বাংলার সংস্কৃতি তাদের খুব ভালো লাগে। তাই এক বন্ধুর আমন্ত্রণে এই অনুষ্ঠানে বাঙালির সাজে এসেছেন।’