অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় মাদারীপুরের দুই যুবক মারা গেছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন আরও একজন। আজ শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) যুবকদের মৃত্যুর খবর এলকায় এসে পৌঁছালে মাতম শুরু হয় পরিবারগুলোতে। আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশেহারা মা-বাবা। পুলিশ বলছে, লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ বলছে, লিখিত অভিযোগ পেলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। আদরের সন্তান আর কোনোদিন ঘরে ফিরবে না, এই শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। আজাহারীতে ভারী চারপাশের পরিবেশ।
শুক্রবার সরেজমিনে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পশ্চিম পাঁচখোলা গ্রামের আলি আক্কাবরের ছেলে মো. সম্প্রাট (২৪) ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পারি দিয়েছিল ইতালির পথে। মাস পাঁচেক আগে রাসেদ খান নামে এক দালালের সাথে চুক্তি হয় ইতালি পৌঁছে দেওয়ার। এ সময় দালাল সম্রাটের পরিবারের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা নেয়। এরপর লিবিয়ার একটি বন্দী শিবিরে আটকে রাখে। চালানো হয় নির্যাতন। ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হতো না। এরপর হঠাৎ করেই খবর আসে সস্রাট মারা গেছে।
সম্রাটের ভাই আজগর বলেন, কতগুলো টাকা খরচ করে ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। এখন আমার ভাই নাই। সে মারা গেছে। এখন টাকাও গেল ভাইও গেল। দালাল বলছে লাশ এনে দেবে।
অনুসন্ধানে জানা দগেছে, দালাল রাসেদ খান ও তার ভাই টুলু মাদারীপুরের বিভিন্ন সহজ-সরল মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে নির্যাতন করে। তার বিরুদ্ধে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে একাধিক মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, গত ১৪ জানুয়ারি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার খালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২০) ও সেনদিয়া গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগীসহ (২৫) বেশ কয়েকজন যুবক ইতালীর উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে গত বুধবার লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় রওয়ানা দেয় তারা। ৩২ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন নৌকায় ৫২জন অভিবাসন প্রত্যাসীকে নিয়ে ইতালী যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার ভুমধ্যসাগরে নৌকার ইঞ্জিন ফেটে যায়। এতে মামুন ও সজলসহ মারা যায় ১২ জন। পরে খবর পেয়ে বেশ কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড। এছাড়া এখনো নিখোঁজ পার্শ্ববর্তী গোহালা ইউনিয়নের পান্নু শেখের ছেলে আপন শেখ।
নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজিব শেখ ও নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী জানায়, মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের সুন্দরদী গ্রামের বাদশা কাজীর ছেলে মোশারফ কাজী প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৩-১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ইতালি পাঠালে ঘটে এই দুর্ঘটনা। সরকারিভাবে তাদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত দালাল মোশারফ কাজী দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়া বসবাস করছে। তার ছেলে যুবরাজ গ্রাম থেকে ইতালি পাঠানোর জন্য যুবকদের সংগ্রহ করতো বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান হাওলাদার আসাদ বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মাদারীপুর সদর থানার ওসি এএইচএম সালাহউদ্দিন বলেন, মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। মামলা হলে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পরে আবার বাদীদের সাথে মিমাংসা করে ছাড়া পেয়ে যায়।