লন্ডনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে চড়ুইভাতি

আয়োজনে ছিল না কোনো আনুষ্ঠানিকতা, না ছিল কোন বক্তব্য পর্ব। না ছিল কোন প্রধান অতিথি, না কোন বিশেষ অতিথি, উদ্যাক্তারা এমন আনুষ্ঠানিকতার কোনো প্রয়োজনই মনে করেননি। শুধুই আড্ডা আর স্মৃতিচারণের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও নিজেদের শৈশবে ফিরে যাওয়া এবং বিলেতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিজ সন্তানদের গৌরবের ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করানো এমন চেষ্টাই ছিলো অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারীদের।

গত রোববার শিকড়ভূমি বাংলাদেশের ৫০তম বর্ষপূর্তীতে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ফিরে দেখা শৈশব: বন বাদাড়ে চড়ুইভাতি’ শীর্ষক এমন একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান হয়ে গেল। অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘সত্যবাণী’র সহযোগীতায় ও এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা এবং তার স্ত্রী সৈয়দা ফেরদৌসি পাশা কলির উদ্যোগে লন্ডনের রেডব্রিজের একটি সবজি বাগানে ছায়াঘেরা সবুজ প্রকৃতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্য এই চড়ুইভাতি অনুষ্ঠান।

দুপুর ১টা থেকে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে বিপুল সংখ্যক শিকড়প্রেমী মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। সাথে ছিলেন ব্রিটেনে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানরা। বাগান থেকে টাটকা সবজি তুলে মাটির চুলায় আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া আক্রান্ত ছলছল চোখে শাড়ি পড়ে আসা নারীরা পুরো সময় ব্যস্ত ছিলেন রান্নায়। বাংলাদেশের গ্রামীণ খাবারের কি নেই তাদের মেন্যুতে। সুটকি ভর্তা, আলু ভর্তা, বেগুন ভর্তা, রুই মাছের মাথা দিয়ে লাউ, কেচকি মাছের চর্চরি, মোরগ ও খাসির মাংস ভুনা-তরকারীর এমন আইটেমগুলোর পাশাপাশি ছিল গুড়ের সন্দেশ, সদ্য তৈরি টাটকা রশমালাই, সেমাইসহ চমচম ও অন্যান্য মিষ্টি সামগ্রী। শাপলা পুকুরের পাড়ে পতপত করে উড়তে থাকা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার নিচে সুতি শাড়ি পরিহিত নারীরা যখন রান্না করছিলেন, তখন লাকড়ি দিয়ে জ্বালানো আগুনের ধোঁয়ায় অনেকেরই চোখ করছিল ছলছল।

অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ সাংবাদিক আবু মুসা হাসান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, \”অসাধারণ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন বহির্বিশ্বে আর হয়েছে কি না আমার জানা নেই। পত পত করে উড়া বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার পাশেই ছোট্ট পুকুরে যখন জাতীয় শাপলা হাসছে, আর এই পুকুরের পাড়েই হচ্ছে চড়ুইভাতির রান্না-তখন কল্পনায়ও আসে না বাংলাদেশেও এমন দৃশ্য এখন আছে কি না। অনুষ্ঠানে এসে স্মৃতিকাতর হয়ে গেলাম, কিছুক্ষণের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিলাম আমার শৈশবে।\”

উদ্যোক্তা সত্যবাণীর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা বলেন, \”আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের বয়স যেমন বাড়ছে, আমাদেরও বাড়ছে ঠিক তেমনি। ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পর সদ্য স্বাধীন দেশে কেটেছে আমাদের ছোটবেলা। আজ পৌঢ়ত্বে এসে সেই সময়টাকেই আবার দেখতে চেয়েছিলাম। সেই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের এই শৈশবে ফিরে যাওয়া। আমাদের শৈশব কেমন ছিল? ব্রিটেনে জন্ম নেয়া আমাদের সন্তানদের এটি দেখালাম, আমাদের গৌরবের ঐতিহ্যের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দিলাম।\”

অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, টিভি উপস্থাপিকা উর্মী মাজহার, সত্যবাণীর বার্তা সম্পাদক নিলুফা হাসান, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ট্রেজারার আ স ম মাসুম, অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ফেরদৌসি পাশা কলি, কমিউনিটি এক্টিভিস্ট জান্নাতুল ফেরদৌস, হোসনা বখত, সৈয়দা বিলকিস মনসুর, হালিমা ইয়াসমিন রহমান ও ব্রিটেনে জন্ম নেয়া প্রজন্মের প্রতিনিধি আইটিভি জার্নালিস্ট মাহাথির পাশা, সাম্প্রতিক সময়ের তারুণ্যের হার্টথ্রব সংগীত শিল্পী নিশ ও ব্যাংকার নাফিস হক প্রমুখ।

Scroll to Top