শিশুদের যৌন-নির্যাতন এবং যৌন হামলার মত অপ্রীতিকর কয়েকটি ঘটনায় অভিযুক্ত বাংলাদেশি আমেরিকান আক্কাস আলী ওরফে মোহাম্মদ আলীর (৬৮) দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে তার বাড়ির সামনে ক্ষুব্ধ জনতা বিক্ষোভ করেছেন। এ বিক্ষোভে ৯ বছর আগে ধর্ষণের একজন ভিকটিমও ছিলেন। এলাকার ভিনদেশিরাও ছিলেন সরব।
নিউইয়র্ক স্টেটের হাডসন সিটির প্রমেনেডি হিলের সন্নিকটে ৩০২, স্টেট স্ট্রিটে ১১ সেপ্টেম্বর এ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘জাগো হাডসন’ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই সংস্থাটি দক্ষিণ এশিয়ান অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করছে।
বিক্ষোভ-সমাবেশে উল্লেখ করা হয়, গত কয়েক দশকে এই আক্কাস আলী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৮ শিশু-কিশোর। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজন পুলিশে অভিযোগ করেছেন। অন্যেরা রয়েছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে সামাজিক লজ্জায় অভিযোগ করছেন না।
বিক্ষোভকারিরা আশা করছেন যে, এলাকার সকল মানুষ যদি নিজের মা-বোন-খালা-ভাগ্নি-ভাতিজির সম্ভ্রমের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে পশুর মত আচরণে লিপ্ত ওই আক্কাস আলীদের বিরুদ্ধে সরব হন, তাহলে অন্যেরাও সামনে আসবেন নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখা ঐ পাশবিকতার ঘটনা পুলিশে জানাতে।
ন্যায়-বিচার নিয়ে সকলের মধ্যে সৃষ্ট শঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত আবারো বিক্ষোভ করা হবে বলে জানান ‘জাগো হাডসন’র প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম জেরিন আহমেদ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে একজন সর্বপ্রথম পুলিশে অভিযোগের পর নানা কারণে সময়ক্ষেপণ করেছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। লাগাতার কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে আক্কাস আলীকে সর্বপ্রথম গ্রেফতার করা হয় গত বছরের নভেম্বরে এবং তৃতীয় বারের মত গ্রেফতার হন এ বছরের মার্চে করোনা মহামারির প্রাক্কালে। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।
জুরিবোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্ষণসহ নির্যাতন ও শিশুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে আক্কাস আলীকে সর্বোচ্চ ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে বলে জানান সেখানকার কলম্বিয়া কাউন্টির ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি। বিক্ষোভের সময় আক্কাস আলী বাসার বাইরে বের হননি।
ধর্ষণকারির প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার জানিয়ে লেখা প্লেকার্ড হাতে জড়ো হওয়া নানা শ্রেণী আর বয়সী লোকজনের সাথে হাডসন সিটির মেয়র কামাল জনসনসহ সিটির সুপারভাইজার লিন্ডা মৌউসম্যান, মাইকেল ছামিদাস, সিটির কর্মকর্তা টিফানি গ্যারিগস, কুইন্টন ক্রস ছিলেন। সকলেই মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সরব ছিলেন।
এই প্রবাসে বেড়ে উঠা জেমিন আহমেদ হচ্ছেন ‘জাগো হাডসন’র প্রধান সংগঠক। তিনি জানান, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর আক্কাস আলীকে হাডসন পুলিশ গ্রেফতার করে ২টি শিশু ধর্ষণের মামলায়। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ৫ বছর থেকে ১১ বছরের দুটি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করেছেন। আমাদের জানা মতে আরো অনেক মেয়েরা আছে যারা এই অমানুষের হাতে আঘাত পেয়েছে।
এই কর্মসূচিতে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে সিটির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এ্যাল্ডারম্যান (কাউন্সিলম্যান-ডেমক্র্যাট) শেরশাহ মিজান বলেন, বিচারাধীন কোন মামলা নিয়ে মতামত/মন্তব্য করতে পারি না। আমি আইনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আদালতেই নির্দ্ধারিত হবে সবকিছু। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি সকলের জন্যেই ন্যায়-বিচার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর।
নোয়াখালীর বাসিন্দা আক্কাস আলী দুই দশকেরও অধিক সময় যাবত হাডসনে বসবাস করছেন। তার মালিকানায় ৩টি ফুডকার্ট (রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রির দোকান) রয়েছে। তার পুত্র-কন্যারা সেগুলোর দেখভাল করেন। তিনি হচ্ছেন সুপারভাইজার। নিয়মিত মসজিদে যান এবং এলাকার প্রবাসীদের সাথেও রয়েছে সখ্যতা।
এমনি অবস্থায় তার বিরুদ্ধে একই কমিউনিটির মেয়েরা পুলিশে অভিযোগ করার পর অনেকেই হতভম্ব হয়েছেন। জুরিবোর্ড তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন আর শিশুর নিরাপত্তা ব্যাহত করার গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। তার আমেরিকান ও বাংলাদেশি পাসপোর্টও আদালতের জিম্মায় রাখা হয়েছে। মামলার তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ কন্স্যুলেট থেকে নতুন পাসপোর্ট যাতে না বানাতে পারেন, সে ধরনের আদেশও রয়েছে কলম্বিয়া কাউন্টি ক্রিমিনাল কোর্ট থেকে।
জানা গেছে, ‘মি টু’ আন্দোলন শুরুর পরই ভিকটিমরা আক্কাস আলীর অপকর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। হাডসন পুলিশের ডিটেক্টিভের পক্ষ থেকে আরও ভিকটিম থাকলে তাদেরকেও নির্ভয়ে সংশ্লিস্ট নম্বরে ফোন করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।