বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে দণ্ডিত রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেয়ার আহবানটিকে আমলেই নিলেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজার এবং বিশেষ সহকারি ম্যাথিউ পটিনজার। অপর ঘাতক নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও একই মনোভাব পোষণ করেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যাঞ্চোয়েয-ফিলিপ স্যাম্পেন।
১১ এবং ১৩ মে উপরোক্ত দুই কর্মকর্তার সাথে ঢাকা থেকে টেলিফোনে কথা হয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের। করোনাভাইরাস, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ দ্বি-পাক্ষিক নানা ইস্যুতে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সময়ে জাতির জনকের দুই ঘাতকের প্রসঙ্গ আনেন ড. মোমেন। বাংলাদেশ আইনের শাসনের ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি ঘটিয়েছে। সে আলোকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে উপরোক্ত দুই ঘাতককে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদেরকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে সোপর্দ করার আহবান জানিয়েছিলেন ড. মোমেন।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, ফিরিয়ে দিলেই নূর চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে তার বিরুদ্ধে দেয়া রায় বাস্তবায়িত করা হবে। এটি কানাডা পছন্দ করে না। কারণ, কোন ধরনের মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাসী নয় কানাডা। নূর চৌধুরীর যদি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা না হয় (অর্থাৎ আজীবন দণ্ড) তাহলে কানাডার কোন আপত্তি থাকবে না বলে আভাস দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন গতকাল বুধবার এ সংবাদদাতাকে ঢাকা থেকে টেলিফোনে জানান, যখনই সুযোগ হয় তখনই আমি বঙ্গবন্ধুর ঘাতকসহ একাত্তরের ঘাতকদের (আশরাফুজ্জামান খান এবং ইঞ্জিনিয়ার জব্বার) অবিলম্বে ফিরিয়ে দেয়ার আহবান রাখি মার্কিন প্রশাসনের কাছে।
কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে এ ব্যাপারে নমনীয় করতে প্রবাসীদের ভূমিকা অপরিসীম বলে উল্লেখ করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, প্রবাসীরা যদি ঘনঘন এসব ঘাতকদের আস্তানার সামনে (করোনা পরিস্থিতির অবসানের পর) মানববন্ধন করেন তাহলে অবশ্যই বিশ্ব মিডিয়ায় বিষয়টি আসবে এবং প্রশাসনের টনক নড়তে বাধ্য।
ড. মোমেন আরও মনে করেন, নিজ নিজ এলাকার কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরের সাথেও জোরদার লবিং চালাতে পারেন প্রবাসীরা। তাহলেও ওদেরকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার পথ সুগম হতে পারে। উল্লেখ্য, রাশেদ চৌধুরী পালিয়ে রয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সানফ্রান্সিসকোতে। অপরদিকে নূর চৌধুরী অবস্থান করছেন কানাডায়।
কয়েকমাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাথে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ড. মোমেন একই আহবান জানিয়েছিলেন। সে সময়েও পম্পেও একইভাবে প্রসঙ্গটিকে এড়িয়ে গেছেন। যারা সারাবিশ্বের মানবাধিকার নিয়ে খবরদারি করে, তারাই বাংলাদেশের জাতির জনক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘাতককে বাংলাদেশের কাছে সোপর্দ করতে কেন এমন গড়িমসি করছে সে প্রশ্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনের। ট্রাম্প প্রশাসনের স্ববিরোধী আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ৩৫ বছরেরও অধিক সময় যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন পেশায় দায়িত্ব পালনের পর সম্প্রতি স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া এই মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা এই ঘাতকদের ফিরিয়ে নিতে আইনগত প্রক্রিয়া অবলম্বনের অভিপ্রায়ে নিউইয়র্কে একটি ল’ফার্ম ভাড়া করার কথা কয়েক বছর আগে ঘটা করে জানিয়েছিলেন সে সময়ের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। সে ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, কানাডায় ল’ফার্ম ভাড়া করার কথা জানি। কিন্তু নিউইয়র্কে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে করা হয়েছিল কিনা তা আমি এখনও জানি না।