সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আজ বুধবার টানা তৃতীয় দিনের মত আক্রান্ত লোকের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আজ আক্রান্ত এক হাজার ১৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জন স্থানীয়। বাকী এক হাজার একজন বিদেশি নাগরিক। এখন পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক সাড়ে চার হাজারের মতো।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য এবং সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০ এপ্রিল থেকে টানা তিন দিন এক হাজারের বেশি মানুষের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে স্থানীয় লোকের সংখ্যা খুবই কম। যেমন ২০ এপ্রিল শনাক্ত এক হাজার ৪২৬ জনের মধ্যে স্থানীয় নাগরিক মাত্র ১৬ জন। ২১ এপ্রিল শনাক্ত এক হাজার ১১১ জনের মধ্যে ২৮ জন স্থানীয় নাগরিক। আর ২২ এপ্রিল আক্রান্ত এক হাজার ১৬ জনের মধ্যে মাত্র ১৫ জন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। অর্থাৎ গত তিন দিনে আক্রান্ত তিন হাজার ৫৫৩ জনের মধ্যে মাত্র ৫৯ জন সিঙ্গাপুরের নাগরিক। বাকীরা বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার ও চীনের নাগরিক।
এ নিয়ে জানতে চাইলে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুুর রহমান আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, গত তিন দিন ধরে সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যাটা জানতে পারিনি। তবে তারা ধারণা দিয়েছে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে চার হাজার। তবে আশার খবর হচ্ছে, বাংলাদেশের আক্রান্ত লোকজনের মধ্যে কারও অবস্থাই গুরুতর নয়। এমনকি দুই মাসের বেশি সময় পর আইসিইউ থেকে কেবিনে নেওয়া বাংলাদেশের কর্মীর শারীরিক অবস্থাও বেশ ভাল।
মোস্তাফিজুুর রহমান জানান, গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে অভিবাসীদের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দুই মাসের বেশি সময় পর আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়া বাংলাদেশের কর্মীর বিষয়টি উল্লেখ করেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বলেন বাংলাদেশের ওই কর্মীর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভাল। তাঁর সুস্থ হতে একটু সময় লাগবে। আশা করি তিনি খুব দ্রুত তাঁর সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুকে কোলে তুলে নিতে পারবেন।
সিঙ্গাপুরের ষ্ট্রেট টাইমসসহ কয়েকটি গণমাধ্যম এবং বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষণ না থাকা সত্বেও বিপুল সংখ্যক লোকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কারণে দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত লোকজন চিহ্নিত হচ্ছেন বেশি সংখ্যায়। এ পর্যন্ত ১০ হাজার ১৪১ জন আক্রান্ত হলেও মারা গেছেন মাত্র ১১ জন। আক্রান্ত বিদেশিদের মধ্যে প্রায় সবাই ডরমিটরিতে থাকেন। সাধারণত এরা কাজে আর ডরমিটরিতে অবস্থানের পাশাপাশি মোস্তফা মার্টের মত বিপনী কেন্দ্র এবং নিজেদের দেশের লোকজন আছেন এমন জায়গায় চলাফেরা করেন। এসব জায়গা থেকে এদের সংক্রমণ হয়েছে বলে বলা হচ্ছে।
এ মুহুর্তে দেশটিতে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজারের মত বাংলাদেশি অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
এদিকে সিঙ্গাপুরে আটকে পড়া বাংলাদেশের ১৯৬ জন নাগরিক আজ দুপুরে ঢাকায় ফিরেছেন। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে ফেরা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে চিকিৎসা এবং বেড়াতে গিয়ে আটকে পড়া লোকজনের পাশাপাশি কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এমন লোকজনও ছিলেন। ফিরতি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরে গেছেন দেশটির ৯৮ জন নাগরিক। বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে নিজেদের নাগরিকদের ফেরানোর জন্য ওই ফ্লাইটের আয়োজন করে।
বিশ্বের ১৩ দেশে মৃত্যু ৩১০ জনের
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যু থামছে না। গত ২৪ ঘন্টায় দেশটিতে অন্তত ৯ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল পর্যন্ত ১৮৭ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া গতকার নতুন করে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩ টি দেশে তিনশ ১০ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৭ জন, যুক্তরাজ্যে ৭৯ জন,সৌদি আরবে ১৫, ইতালিতে ৮ জন, কানাডায় ৬, স্পেনে ৫, কাতারে ৪ জন, এবং সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কেনিয়া লিবিয়া ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।