করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনিয়মিত হয়ে পড়া বিদেশি কর্মীদের বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাহরাইন। বাহরাইনে বিদেশি কর্মীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সদ্ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াসহ মূলত যথাযথ কাগজপত্রের জন্য অনিয়মিত হয়ে পড়া বাংলাদেশের কর্মীরা এ সুযোগ পেতে যাচ্ছেন।
বাহরাইনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো আজ শনিবার জানিয়েছে, বাংলাদেশের অনিয়মিত হয়ে পড়া কর্মীদের বৈধতার সুযোগ দিতে বেশ কিছুদিন ধরেই বাহরাইনকে অনুরোধ জানানো হচ্ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাহরাইনের বাদশাহ অনিয়মিত হয়ে পড়া বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করার ঘোষণা দেন। এ মুহূর্তে দেশটিতে নতুন করে কোনো বিদেশি কর্মী নেওয়া হচ্ছে না। তবে আগামী বছরের শুরুতে দেশটির অর্থনীতি পুরোদমে চাঙা হয়ে উঠলে সেখানে নতুন করে বিদেশি কর্মী নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানতে চাইলে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম শনিবার বলেন, বাহরাইন সরকার এ মাসের শুরুতে অনিয়মিত হয়ে পড়া ৫৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে বৈধতা দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের অনিয়মিত হয়ে পড়া ৫০ হাজার কর্মীর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ জন্য এরই মধ্যে দূতাবাস বাংলাদেশের কর্মীদের যথাযথভাবে আবেদনের জন্য কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কর্মীরা যাতে সর্বোচ্চ সুফল পান, সে জন্য এখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাহরাইন সরকার এরই মধ্যে আগামী জুন মাস পর্যন্ত বিদেশি কর্মীদের সব ধরনের মাশুল মওকুফ করেছে।
নজরুল ইসলাম জানান, এ মুহূর্তে বাহরাইনে প্রায় দুই লাখের মতো বাংলাদেশের কর্মী কাজ করছেন। নানা কারণে তাঁদের মধ্যে অন্তত ৫০ হাজার অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশের কর্মীরা মূলত নির্মাণশ্রমিক, গাড়িচালক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া প্রায় হাজার পাঁচেক বাংলাদেশি ছোটখাটো ব্যবসাও পরিচালনা করেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশের কর্মীরা যাতে নিয়মিত হওয়ার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন, এ জন্য বাহরাইন পোস্টের মাধ্যমে তাঁদের জন্য নতুন পাসপোর্ট ইস্যু কিংবা পাসপোর্ট নবায়নের ব্যবস্থা করছে দূতাবাস। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের কর্মীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে এলএমআরএর মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাহরাইন ফিন্যান্স কোম্পানিকে যুক্ত করছে।
বাহরাইনের শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বা এলএমআরএর প্রধান নির্বাহী ওসামা আল আবসির বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জিডিএন সম্প্রতি এ খবরে জানিয়েছে, মূলত ফ্রি ভিসা নিয়ে যাঁরা বাহরাইনে গিয়েছেন, তাঁরা ওই সুযোগ পাবেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় আনা হবে। এর ফলে অনিয়মিত হয়ে পড়া বিদেশি কর্মীরা কোনো ফি ছাড়াই বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। এসব কর্মী যেমন বাহরাইনে বৈধ হয়ে নতুন করে কাজ করার সুযোগ পাবেন, তেমনি কোনো রকম জরিমানা না দিয়েই চাইলে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারবেন। অনিয়মিত হয়ে পড়া বিদেশি কর্মী কিংবা যেসব বিদেশি কর্মীর কাজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে, তাঁরা এলএমআরএর দেওয়া ফ্ল্যাক্সিবেল ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করে সাধারণ ক্ষমার সুযোগটি নিতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে ওসামা আল আবসি জিডিএনকে বলেন, এখন যে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটিকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নিয়ে বিদেশি কর্মীদের আবার নিয়মিতভাবে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা কিংবা তাদের দেশে ফেরার সুযোগ করে দিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগের দফার মতো এবারও ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনের সময়সীমা থাকছে।
তবে তিনি এটিও উল্লেখ করেছেন, যেসব বিদেশি কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, তাঁরা সাধারণ ক্ষমার সুবিধা পাবেন না। এর মানে হচ্ছে, যাঁরা পর্যটক ভিসা নিয়ে বাহরাইনে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থাকছেন কিংবা যাঁদের ওপর বাহরাইন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে, তাঁরা ওই সুযোগ পাবেন না।
প্রসঙ্গত, বাহরাইনে ২০১৫ সালে ছয় মাসের জন্য বিদেশি কর্মীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বৈধ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় ৪২ হাজার বিদেশি কর্মী বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার আবার বাহরাইনে কাজের জন্য থেকে যান। বাকি ১০ হাজার ফিরে যান নিজেদের দেশে।
গত বছরের ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মুহূর্তে দেশটিতে ৪ লাখ ৯৮ হাজার বিদেশি কর্মী রয়েছেন।
:প্রথম আলো