বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন বাংলাদেশি-ব্রিটিশ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি করোনা হেল্পলাইন টিম গঠন করেছে। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ উপলক্ষে দেয়া এক শুভেচ্ছা বাণীতে একথা উল্লেখ করেন।
হাইকমিশনার বাংলা নববষের্র শুভলগ্নে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশি ভাই-বোনদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে করোনা মহামারী আক্রান্ত এই বিশ্বে সবার সুস্থতা, সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ূ ও মঙ্গল কামনা করেন এবং নববর্ষে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার প্রত্যয় নিয়ে সবাইকে ঘরে থাকার ও স্বাগতিক সরকারের নির্দেশনা মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এবছর বাংলা নববর্ষ এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষিতে যখন বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডসহ পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এবং গোটা মানবজাতি এক বৈশ্বিক মহামারী, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত। এই সংকটের সময়ে এবং লকডাউন-এর নিয়ম মেনেই বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডন অনলাইন, পোস্টাল ও ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন-এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সার্বক্ষণিক কনস্যুলার সেবা চালু রেখেছে। তাছাড়া, হাইকমিশন বাংলাদেশি-ব্রিটিশ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি করোনা হেল্পলাইন টিম গঠন করেছে বিশেষ করে সেসব বাংলাদেশি ভাইবোনের জন্য যারা এদেশের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসের আওতাভূক্ত নন। বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী যারা এদেশে অধ্যয়নরত এবং বয়োবৃদ্ধ ও বাংলা ভাষায় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে চান তাদের জন্য। এ বিষয়ে হাইকমিশনের ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইনে (০৭৪৩৮৪২৯৯৩৯) যোগাযোগ করলে তাদের স্বেচ্ছাসেবক বাংলাদেশি-ব্রিটিশ চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বাংলাদেশি-ব্রিটিশ যাদের আত্মীয়-স্বজন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে বিশেষ চার্টার ফ্লাইটে ফেরত আসতে চাচ্ছেন, তাদের যথা শীঘ্র সম্ভব ব্রিটিশ সরকারের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে রেজিস্টার করার এবং এ সংক্রান্ত কোন সহায়তার প্রয়োজনে বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের ০৭৪০৪৬৮৭৭৪৫ নম্বরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছায় হাইকমিশনার বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী সেইসব বাংলাদেশি চিকিৎসক, নার্স, কেয়ার-গিভার, হেলথ প্রফেশনালস, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও স্থানীয় সরকার কর্মীদের যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে নিরন্তর সেবা করে যাচ্ছেন। বিনম্র শ্রদ্ধা জানান তাদের প্রতি, যারা মানুষের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এছাড়া তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং তাদের পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যবৃন্দের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশি কমিউনিটির যেসব নেতৃবৃন্দ, স্বেচ্ছসেবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ যারা এই ঘোর দুর্দিনে দুস্থ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন, আর্থিক, খাদ্য ও মানবিক সাহায্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন- তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যের মত বাংলাদেশের মানুষও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহসের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যকরী ও সময়োগযোগী করোনা প্রতিরোধ পদক্ষেপসমূহের কারণে বাংলাদেশে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেকাংশেই কম। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দ্যেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন করোনা যোদ্ধা তথা ডাক্তার, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দিনমজুর, রিকশাওয়ালাসহ সমাজের সর্বস্তরের খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ষোল শত কোটি টাকারও বেশি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
ইতোপূর্বেও তিনি করোনাভাইরাসের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি রোধকল্পে গার্মেন্টস শ্রমিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জন্য প্রায় তিয়াত্তর হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণা দেন। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ জন্য হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, ১৪২৭ বাংলা বর্ষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী হওয়ার প্রেক্ষিতে বাঙালি জাতির জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্য্য বহন করে।
তাই এই নববর্ষে আপনারা আপনাদের নতুন প্রজন্মকে বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সাহিত্য এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে উদ্বুদ্ধ করবেন, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। পরিশেষে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এই নববর্ষে ঘরে থেকে, করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থেকে আমরা আমাদের চারপাশের আঁধারকে কাটিয়ে উঠবই, ইনশাআল্লাহ। ১৪২৭ বাংলা বর্ষ এবং মুজিববর্ষ আমাদের মাঝে সুদিনের নতুন বার্তা নিয়ে আসবেই ইনআশাল্লাহ।