যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিনে দেওয়া বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য স্থান। সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম-কর্ম অবাধে পালন করছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধান সে অধিকার নিশ্চিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজক ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার শেষ দিনে সম্মেলনে ভাষণ দেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ ব্রাউনব্যাকসহ বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই সম্মেলনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারাবিশ্বে টেকসই শান্তি ও স্থিতির স্বার্থেই সকলকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সর্বক্ষেত্রে জাগ্রত রাখতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নয় মানবতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাহলেই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন-পরিক্রমা ত্বরান্বিত হবে।
শুধু ওয়াশিংটন ডিসিতে নয়, আঞ্চলিক পর্যায়েও এ ধরনের ধর্মীয় স্বাধনতা সম্মেলন করার পরামর্শ দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, শিগগির বাংলাদেশ এই সম্মেলনের হোস্ট হতে আগ্রহী। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বিশ্বাস করেন যে, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার এবং সে চেতনায় সবকিছু হচ্ছে বাংলাদেশে। সকল ধর্ম এবং জাতি-বিশ্বাসের মানুষ কোন ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়া নিরাপদে মর্যাদার সাথে জীবন-যাপন করতে সক্ষম হয়-এমন একটি পরিবেশ তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক এই উদ্যোগের অংশিদার হতে পেরে বাংলাদেশও গৌরববোধ করছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সবসময় সকল ধর্মবিশ্বাসী মানুষের সমঅধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সে পথেই হাঁটছেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়-বিচার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতা প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা চলেছে। ধর্মের নামে উগপন্থিরা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্রের তকমা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যার সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুনরায় একাত্তরের চেতনায় ফিরেছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে-নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম-কর্ম সম্পাদনে সক্ষম হচ্ছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বাংলাদেশের ধর্মীয়-সম্প্রীতি আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। ধর্মের কারণে কেউ যাতে বিমাতাসূলভ আচরণের শিকার না হন, ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ যাতে সহিসংসতা চালাতে না পারে সেজন্যে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদে লিপ্তরা শুধু একটি ধর্ম-বিশ্বাসী লোক নয়, তারা বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ। অর্থাৎ ওরা মানবতার শত্রু। ওদেরকে প্রতিহত করতে বিবেকসম্পন্ন সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ হচ্ছে মানবিকতার উর্বর ভূমি। মিয়ানমার জান্তার বর্বরতার ভিকটিমরা প্রাণের ভয়ে মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়লে তাদেরকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানের ঘটনাটি আজ কারো অজানা নেই। এভাবেই মানবিকতাকে প্রাধান্য দেয় বাংলাদেশ।
ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধনকে সুসংহত রাখতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম বলে উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, সর্বাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে সামজিক-সম্প্রীতি তথা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বাস্তবে তা খুব কম সময়েই দেখা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যমান শান্তি এবং স্থিতি বিনষ্ট হয় এমন প্রচারণা চালিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ উষ্কে দেয়া হচ্ছে। সহনশীলতা ধ্বংস করা হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভক্তির রেখা বিস্তৃত করা হচ্ছে।
এই সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন।