মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আসুন, দেখুন এবং এ দেশে বিনিয়োগ করুন।’ বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুরে হোটেল রয়াল চুলানে একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ‘গ্লোবালাইজেশন এন্ড ইমার্জিং ইকোনমি’ শীর্ষক অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএমসিসিআই) এই কনফারেন্স আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং মালয়শিয়া সরকারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উপমন্ত্রী ড. ওয়াইবি ওং কিয়ান মিং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিএমসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসাইন, মালয়শিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই-কমিশনার শহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে মালয়শিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাই-কমিশনার আমীর ফরিদ আবু হাসান উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। বক্তারা সকলেই বাংলাদেশ ও মালয়শিয়ার মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কনফারেন্সের প্রথম আলোচনা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ড. আতিউর রহমান। ওই অধিবেশনে আলোচনা করেন পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান হাবিব মনসুর, একে খান গ্রুপের পক্ষ থেকে সালাহউদ্দিন কাশেম খান, স্ট্যানচার্ট ব্যাংক মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী আবরার আনোয়ার এবং বাংলাদেশে রবির প্রধান নির্বাহী মাহতাব আহমেদ।
ড. আতিউর বলেন যে, এশিয়ায় যে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। অবকাঠামোগত কিছু কমতি থাকা সত্বেও এখানকার তরুণ জনশক্তি, গুণমানের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তাদের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা এবং বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নিজ দেশে ফেরত নেয়ার যে সুযোগ বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে রাখা হয়েছে তা তাদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করছে।
তিনি বলেন, এছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য পাঁচ থেকে সাত বছরের কর অবকাশের মতো বেশ কিছু আর্থিক প্রণোদনাও রয়েছে। দেশজুড়ে যে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে সেগুলোর কাজ শেষ হলে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়। এ দেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়তে শুরু করেছে এবং গত বছরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই এ প্রবাহের গতি ছিলো সর্বোচ্চ। এ দেশের ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের প্রযুক্তি ও ব্র্যান্ডের পণ্যের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ থাকাটা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিশেষ সুবিধা দিতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এবং সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার প্রতি যে বিশেষ মনযোগ দিচ্ছেন তার ফলে এফডিআই প্রবাহ দ্রুততর হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ড. আতিউর বলেন যে, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাপক সাংস্কৃতিক সাদৃশ্য রয়েছে এবং বহু বছর ধরেই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। তাই মালয়শিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিশেষ লাভবান হবে বলে তিনি মনে করেন।
এছাড়াও তিনি দুই দেশের সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এফটিএ চুক্তি স্বাক্ষর করার আহ্বান জানান।
মালয়শিয়া সফরের প্রথম দিনে ড. আতিউর বুধবার রাতে শাকিল চৌধুরীর এনআরবি সেন্টারের উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় মালয়শিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে মতবিনিময় করেন।