মানুষের কর্মব্যস্ত প্রতিদিনকার জীবনে ‘সরকারি ছুটি’ যেন এক পশলা বৃষ্টির অপর নাম। কিছু কিছু বিশেষ পেশার খাতিরে এসব ছুটি নিয়মিত না মিললেও সাধারণভাবে সবাই এই ছুটিগুলো অস্থির জীবনে এক ঝলক প্রশান্তির মতোই গ্রহণ করেন।
সরকারি ছুটি, জাতীয় ছুটি বা রাষ্ট্রীয় ছুটি বলতে মূলত বিভিন্ন ক্যালেন্ডারের হিসেবে এমন কিছু বিশেষ দিনকে বোঝানো হয়, যে দিনগুলোতে সব ধরনের দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখা আইনে স্বীকৃত।
বিশ্বের একেক দেশে সরকারি ছুটির হিসেব একেক রকম। বৈশ্বিক কিছু দিনের পাশাপাশি নিজস্ব কিছু রাষ্ট্রীয় উপলক্ষ, বার্ষিকী, গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ও ধর্মীয় উৎসবভেদে এই তারতম্য হয়।
এমনই তারতম্য নিয়ে বৈশ্বিক তথ্য-উপাত্ত বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাসের করা তালিকায় বছরে সর্বোচ্চ সংখ্যক সরকারি ছুটির তালিকায় প্রথম স্থানে আছে ক্যাম্বোডিয়া। দ্বিতীয় হয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং তৃতীয় ভারত ও কাজাখস্তান।
কম্বোডিয়া
কম্বোডিয়া জনগণ বছরে ২৮টি সরকারি ছুটি কাটায়, যা পৃথিবীর অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। দেশটির অধিকাংশ জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হওয়ায় এসব ছুটির বেশিরভাগই ধর্মীয় আয়োজন সংশ্লিষ্ট।
কম্বোডিয়ায় মূলত ঐতিহ্যবাহী ‘খামের’ চান্দ্রপঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। অবশ্য মৌসুমের পরিবর্তনের হিসেব মেলাতে সৌর ক্যালেন্ডারও পর্যবেক্ষণে থাকে। তাই প্রতি বছর এ দেশে সরকারি ছুটির তারিখ বদলায়।সরকারি ছুটি
শ্রীলঙ্কা
তালিকায় ২৫টি বার্ষিক সরকারি ছুটি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে বহু নৃগোষ্ঠী ও বহু ধর্ম স্বীকৃত। তাই এখানে সরকারি ছুটিতে রয়েছে বৈচিত্র্য। বেশিরভাগ সরকারি ছুটি বৌদ্ধ ধর্ম সংক্রান্ত হলেও হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর সম্মানেও ছুটি রয়েছে।
এছাড়াও এখানে ‘পোইয়া’ নামে একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় সরকারি ছুটি আছে, যা প্রতি চান্দ্রমাসে একবার পূর্ণিমার সময় উদযাপিত হয়। শ্রীলঙ্কায় যাদের সরকারি ছুটির দিনগুলোতে কাজ করতে হয় তাদেরকে সেসব দিনের জন্য দৈনিক দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
ভারত
শ্রীলঙ্কার চেয়েও নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য বেশি ভারতে। সেখানে রাজ্যভেদে আঞ্চলিকভাবে অসংখ্য ছুটি পালন করা হয়। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন ধর্মের প্রধান দিনগুলোসহ স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস এবং মহাত্মা গান্ধির জন্মদিন উদযাপিত হয়। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভারতের জনগণ মোট ২১ দিন ছুটি পান।
সরকারি ছুটি
এই তালিকায় শীর্ষ ১১ সর্বোচ্চ সরকারি ছুটি প্রদানকারী দেশের তালিকায় স্থান পায়নি বাংলাদেশ। যদিও বাংলাদেশে প্রায় ১৪ দিন সাধারণ সরকারি ছুটি রয়েছে।
সরকারি ছুটির ভালো দিক হিসেবে সবার আগেই বলা যায় পরিবারের সঙ্গে একটু সময় কাটানোর সুযোগের কথা। তার সঙ্গে ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে নিজের জন্য একটু বিশ্রাম। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কাজের মাঝে এই ছুটিগুলো একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি।
তবে সরকারি ছুটি বেশি হলে তা একটি দেশের অর্থনৈতিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলেও মনে করেন অনেকেই। কেননা ওই সময়টায় সব ধরনের কাজ থেকে থাকে। থেমে থাকে বড় বড় সব আর্থিক লেনদেনও। এতে বিশেষ করে ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক খাতগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।