মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আনা আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। বুধবার শুনানি শেষে আপিলটি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ভবিষ্যতে রায়ের জন্য রেখেছেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বেঞ্চ আজহারের পক্ষে এ মামলার আপিলে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ পক্ষের শুনানি শেষে বুধবার এ আদেশ দেয়। এ আপিল বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।
আদালতে দণ্ড বহালের আর্জি পেশ করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে খালাসের আর্জি জানিয়ে এটিএম আজহারুল ইসলামের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানি করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আনা নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত হয় আজহারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত ১,৪০০ লোককে হত্যা এবং ১৪ জনকে খুনের অপরাধে। এছাড়া ওই অঞ্চলের বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ার অভিযোগে এ আল-বদর কমান্ডারকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আইন অনুযায়ী সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে দন্ডিত এই আসামি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল এটিএম আজহারের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এস এম ইদ্রিস আলী। ওই বছর ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয় ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর আজহারের বিচার শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩৮ মামলায় রায় ঘোষণা করা হয়। আরও একটি মামলা রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতে সাতটি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি রায়ের পর জামায়াতের প্রাক্তন আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, প্রাক্তন দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের প্রাক্তন নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপিল ও আপিল রায়ের রিভিউতেও জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছিল। এবার আজহারের আপিল মামলা রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি অষ্টম মামলা, যা রায়ের পর্যায়ে এসেছে। এছাড়াও আরও বেশকয়েকটি মামলা আপিলে নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব আপিল মামলা শুনানি ও নিস্পত্তি হবে বলে জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।