দীর্ঘ নয় বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেন। এসময় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন তাদের স্বাগত জানান।
পরে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজীব আহসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সাত দফা দাবি দিয়েছি। তফসিল তিন মাস পেছানো, রাজনৈতিক সহাবস্থান স্থিতিশীল করা। আজ (গতকাল) প্রথম এসেছি, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করবে, সহাবস্থান স্থিতিশীল হবে। একটি সামগ্রিক সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং তারপর ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুঁইয়া প্রমুখ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস ও হলগুলোয় সব ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত হওয়ার ন্যূনতম তিন মাস পর তফসিল ঘোষণা, অংশগ্রহণমূলক ও ভীতিহীন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে হলগুলো থেকে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, সব শিক্ষার্থীকে ভোটার ও প্রার্থী হওয়া নিশ্চিত করতে ৩০ বছরের বয়সসীমা বাতিল, ছাত্র সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নেতাদের নির্বাচনী প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা না রাখা, ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো প্রার্থী ও নেতাকর্মীকে কোনো ধরনের হয়রানি, মামলা অথবা গ্রেপ্তার না করা, ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে গঠিত কমিটির পুনর্গঠন, ডাকসু গঠনতন্ত্রে সন্নিবেশিত ৫ (এ) অগণতান্ত্রিক ধারাটি সংশোধন করে ছাত্র সংসদ বিলুপ্তি অথবা কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সভাপতি ও ছাত্র সংসদের যৌথ সিদ্ধান্তের বিষয় সংযোজন করতে হবে।
রাজীব আহসান আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন হবে, একে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি, ইতিবাচক চিন্তা করছি এবং ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। একই সঙ্গে আমরা সহাবস্থানের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান, হলগুলো থেকে কেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ধারা রয়েছে সেগুলোর পরিবর্তন করার কথা বলেছি। আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পূরণ করবে, সে বিষয়ে আন্তরিক ও আত্মবিশ্বাসী।
প্রার্থিতা চূড়ান্তের বিষয়ে এক প্রশ্নে রাজীব আহসান বলেন, ‘আমরা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সবার সঙ্গে কথা বলছি। আমরা পুনঃতফসিল দাবি করছি। তারপর আমাদের প্রার্থী তালিকা বা অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করা হবে।’
আকরামুল হাসান বলেন, ‘আমরা মনে করি, ডাকসুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইতিবাচক ও গণতান্ত্রিক যে রাজনীতির সূচনা হয়েছে, আজকে এই পথচলার প্রথম যাত্রা শুরু। আমাদের এ ক্যাম্পাসে অবস্থান অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই, ছাত্র রাজনীতির অতীত গৌরব এবং পরমতসহিষ্ণুতা ও সবার সহাবস্থানের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকুক। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে আসেন। এর কিছু সময় পরে প্রায় ত্রিশ জনের মতো নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে যোগ দেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মধুর ক্যান্টিনে এসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন। অন্যদিকে আগে থেকেই মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতাকর্মী। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মধুতে ঢুকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সাদ্দাম তাদের বসার চেয়ার দেখিয়ে দেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় স্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মধুর ক্যান্টিনে এলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘খালেদা জিয়া’ বলে স্লোগান দেওয়া শুরু করে। দুই সংগঠনের নেতাকর্মীদের স্লোগানে জমে ওঠে মধুর ক্যান্টিন প্রাঙ্গণ। পরে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন সবাইকে স্লোগান দেওয়া বন্ধ করতে বলেন। ক্যান্টিনে অন্য টেবিলে বসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি তুহিন কান্তি দাসের সঙ্গেও করমর্দন করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে ছাত্রদলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্রদল আজকে মধুর ক্যান্টিনে এসেছে, তাদের স্বাগত জানাই। তবে একটা কথাই বলব, আপনারা নামে ছাত্রদল, কিন্তু কাজেকর্মে ছাত্রদের সঙ্গে আপনাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্র সংগঠন হিসেবে বলতে চাই, আপনারা সম্মেলন করে সাধারণ ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেন। তা না হলে যে বিষয়টা হবে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না এবং সাধারণ ছাত্ররা আপনাদের বয়কট করবে।
তিনি বলেন, ছাত্রদল এতদিন মধু ক্যান্টিনে না এসে আমাদের দোষারোপ করেছে। কিন্তু তারা আজকে এসে বুঝতে পারল, আমরা কারো বাধা না, আমরা আমাদের নিজেদের রাজনীতি করি, যার যার রাজনীতি সে সে করবে। এতদিন পরে এসেছে সেটা ঠিক। আমাদের নতুন কমিটি হয়েছে, ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, ডাকসু নির্বাচন করতে হবে।
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/বিএনকে