রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও চীনের ভেটো (আমি মানি না) ঠেকাতে সরকারকে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ পরামর্শ দেন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের নিন্দা জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের আনা প্রথম প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল চীন। অবশ্য পরবর্তীতে আনা আরেকটি কাটছাঁট প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছিল চীন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানে আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, এ প্রচেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে যাতে রাশিয়া ও চীন তাদের ভেটো প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি- রোহিঙ্গারা যারা এসেছে তাদেরকে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের কথা আমরা বলিনি। আমরা বলেছি- সাময়িকভাবে তাদের আশ্রয় দিতে হবে, মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে হবে।’
‘একইসঙ্গে রোহিঙ্গারা যাতে করে নাগরিকত্ব নিয়ে সম্মানের সঙ্গে নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারকে করতে হবে এবং দ্রুততার সঙ্গেই তা করতে হবে’ যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
এসময় অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা প্রথম থেকে দাবি করে আসছিলাম। তারা দায়িত্ব গ্রহণের পর ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এখন এই কর্মকাণ্ডে জনবল বাড়াতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ঘরবাড়ি তৈরি করতে হবে।’
রোহিঙ্গাদের জন্য বিএনপির নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে এই অসহায় রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এখনো আমাদের নেতৃবৃন্দ কাজ করে যাচ্ছেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারকে শুরু থেকেই বারবার বলেছি এই মানবিক বিপর্য্য় রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। কিন্তু বিশ্বমত যখন সৃষ্টি হয়েছে, তখন সরকার সক্রিয় হয়েছে।’
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে মঙ্গলবার বিকালে বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান বিএনপি মহাসচিব। বুধবার সকালে উখিয়া কলেজ মাঠে সেনাবাহিনীর ত্রাণ ভাণ্ডারে দুই ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর করেন মির্জা ফখরুল। ক্যাম্পের কর্মকর্তা মেজর রফিক এসব ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান সারোয়ার, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, লুৎফর রহমান কাজল, মাহবুবুর রহমান শামীম, শরীফুল আলম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শায়রুল কবির খান, উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সারোয়ার জাহান চৌধুরী, জেলা ছাত্রদল সভাপতি রাশেদুল হক রাসেল প্রমুখ।
পরে বিএনপি মহাসচিব উখিয়ার বাগগুনা, বালুখালি ও থাইমখালি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে ত্রিপল, জামা-কাপড়, হাড়ি-পাতিল, খাদ্য সামগ্রী, ওষুধ, টিউবওয়েল প্রভৃতি রয়েছে।
এছাড়া ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, সন্ধ্যায় এক কর্মী সভায় বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসএফ