‘ইসলামের মৌলিক বিধান’ পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের পড়াশোনা করানো উচিত নয় বলে মনে করেন হেফাজতে ইসলামের আমীর আহমদ শফী। তার মতে, ‘ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়াশোনা করলে পর্দার লঙ্ঘন হয়।’ শনিবার (১২ জানুয়ারি) রাতে আহমদ শফীর কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তীব্র সমালোচনায় পড়েন আহমদ শফী। ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এবার নতুন বক্তব্য সামনে এনেছেন তিনি।
বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুল ও খণ্ডিতভাবে বক্তব্য উপস্থাপনের দাবি করে আহমদ শফী বলেন, ‘বক্তব্যে আমি মূলত বলতে চেয়েছি, ইসলামের মৌলিক বিধান পর্দার লঙ্ঘন হয়, এমন প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের পড়াশোনা করানো উচিত হবে না। আমাদের মনে রাখতে হবে, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এখানে শিক্ষা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনাসহ যাবতীয় সব কিছুই রয়েছে। ইসলামে নারীদের শিক্ষার বিষয় উৎসাহিত করা হয়েছে। সবাই জানেন যে, উম্মুল মুমিনিন হজরত মা আয়েশা ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস। তিনি শিক্ষাগ্রহণ না করলে উম্মত অনেক হাদিস থেকে মাহরুম হয়ে যেতো।’
আহমদ শফী আরও বলেন, ‘এর পাশাপাশি ইসলামের একটি মৌলিক বিধান হচ্ছে পর্দা। নারীদের পর্দার বিষয় ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আমি আমার বক্তব্যে বলতে চেয়েছি, শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে যেন পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা না হয়। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রে সহশিক্ষা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একইসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এতে পর্দার লঙ্ঘন হয়। আমি মূলত এই সহশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেই মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছি।’
হেফাজত আমির আরও বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আমি বা আমরা নারী শিক্ষার বিরুদ্ধে নই। তবে নারীর জন্য নিরাপদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয় আমরা আগেও সতর্ক করেছি, এখনো করছি। আমরা চাই, নারীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক, তবে সেটা অবশ্যই নিরাপদ পরিবেশে থেকে এবং ইসলামের মৌলিক বিধানকে লঙ্ঘন না করে। শিক্ষা গ্রহণ অবশ্যই জরুরি, তবে সেটা গ্রহণের জন্য আমরা আমাদের কন্যাদের অনিরাপদ পরিবেশে পাঠাতে পারি না।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমাকে নারীবিদ্বেষী ও নারী শিক্ষাবিদ্বেষী বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এর আগে শুক্রবার জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ১১৮ তম মাহফিলে আহমদ শফী’র দেওয়া একটি বক্তব্য ভিডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না দিতে এবং দিলেও সর্বোচ্চ ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর জন্য ওয়াদা করিয়েছেন আহমদ শফী। পরে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনা শুরু হয়।
এর প্রতিক্রিয়া শনিবার শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘এটা হেফাজত আমিরের ব্যক্তিগত অভিমত।’ এই অভিমত রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।