বঙ্গভবনে হঠকারী কাজের জন্য গণ অধিকার পরিষদের যুক্ত থাকার সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন দলটির সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা ৭ মিনিটের নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লাইভে এসে এ দাবি করেন তিনি।
নুর বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হ্রাস করতে আমাদের কাজ করতে হবে। কৃষক যেন পণ্যের ন্যায্যামূল্য পায় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে। জাতীয় ঐক্যে ও সংহতি তৈরির জন্য সহনশীল মনোভাব তৈরি করতে হবে। কিন্তু কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু দল মনে করছে এখনই ক্ষমতায় চলে আসছে। আপনাদের এ ধরনের কাজকর্ম ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসবে। সামনের সম্ভাবনাকে বিনাশ করে দেবে।
‘এটা অন্তর্বর্তী সরকার। কোনো রাজনৈতিক দল উৎপাতের চেষ্টা করলে সাইজ হয়ে যাবে। সেনাবাহিনী সাইজ করবে, প্রশাসন সাইজ করবে। রাজনৈতিক দল যার যার কর্মসূচি পালন করবে। যার যার রাজনীতি করবে কেউ কউকে বাধা দেবে না। কেউ কারও হস্তক্ষেপ করবে না। এবং সবাই মিলে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা যায় সেটাই ভাবতে হবে।’
নুর বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতন এবং পদত্যাগ একটা ডেড ইস্যু। তার কামব্যাক করার সুযোগ নাই। যদি আসেনও জেলে যেতে হবে তাকে। ফাঁসির মঞ্চে তাকে যেতেই হবে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চিপাচাপা থেকে মিছিল বের করলে কিংবা কোনো ধরনের আস্ফালন দেখালে প্রত্যেককে ধরে ধরে পিটিয়ে জেলে দিতে হবে। কারণ তারা গণহত্যার দোসর।’
‘তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার অধিকার কারো নেই। কিন্তু গণহত্যার দোসররা যদি আস্ফালন দেখায় কিংবা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, অবশ্যই তাদের প্রতিরোধ করতে হবে এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করতে হবে,’ যোগ গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার এবং জনগণের সঙ্গে রয়েছে। তিনি যতক্ষণ দায়িত্বে থাকছেন আমরাও তাকে নিয়েই কাজ করতে চাই। যারা হঠকারী কাজকর্মের জন্য বঙ্গভবনের সামনে জড়ো হয়েছেন, তারা সবাই সরে যাবেন। সেখানে কোনোভাবেই ভিড় করা যাবে না।’
সংবাদমাধ্যমের উদ্দেশ্যে নুর বলেন, ‘মিডিয়া ভাইদের বলবো আপনারা কোন ইস্যু নিউজে আনবেন, কার বক্তব্য প্রচার করবেন সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সেদিন দেখেছি পপুলারে চাঁদাবাজির জন্য একজনকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা কান ধরে উঠবস করিয়েছে। কিন্তু ওই ব্যক্তির বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে। তিনি নাকি আবার নতুন প্ল্যাটফর্মও গঠন করেছেন, কি যেন নাম। আমাদের গণ অধিকারের সঙ্গেও একসময় ছিলেন। পরে আমরা তাকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। মিডিয়া কাভারেজ, নৈরাজ্য এবং বিশৃঙ্খলার জন্য তিনি বঙ্গভবনে গেছেন। মিডিয়ায় তাকে লাইভ দেখাচ্ছে। এ বিষয়ে সব গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বলছে এই আন্দোলনে নাকি আমার দলও নেতৃত্ব দিচ্ছে। গণ অধিকার পরিষদের সাইনবোর্ডও ব্যবহার করা হয়েছে।’
‘মূলত আমার প্রতিদ্বন্দ্বীরা যারা উত্থান চায় না, তারা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য কিছু দলছুট ছেলেপেলে দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের নামে বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মাঝে একটা ব্যানার দাঁড় করিয়ে দিয়ে অরাজতদা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। প্রকৃতপক্ষে গণ অধিকার বাংলাদেশের বতর্মান সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল এবং জেনজির প্রতিনিধিত্বকারী দল। আগামীতে আশা করি তরুণদের সমন্বয়ে এই দল দেশের রাষ্ট্র বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে,’ যোগ করেন নুর
গণ অধিকার পরিষদ রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত। এ ধরেনের হঠকারী কাজে যুক্ত থাকার সুযোগ নাই। যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে থাকা যায় কিন্তু নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলা যায় না বলেও মন্তব্য করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলন করে বেশ কয়েকটি সংগঠন ও ছাত্রজনতা। রাত ৮টার দিকে তাদের মধ্যে কিছু আন্দোলনকারী বঙ্গভবনের সামনের রাস্তায় গাছের শুকনো ডাল ভেঙে এনে আগুন ধরিয়ে দেন। একাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনের ভেতরে প্রবেশের চেষ্টাও করে। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া সাউন্ড গ্র্যানেডে সাংবাদিকসহ কয়েকজন আহত হন। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশের কয়েকজন সদস্যও আহত হয়েছেন।