পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থানের সাফল্য ও উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দিতে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চলছে।
এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষের শক্তির কাছে, গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে বিনীত আহ্বান, আপনারা পরাজিত অপশক্তির পাতা ফাঁদে পা দেবেন না। ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানকে চূড়ান্ত সফলতায় নিতে হলে কেউ দখলদারত্বে লিপ্ত হবেন না, দখলদারত্বে সহায়তা করবেন না, কেউ দুর্বলের ওপর আঘাত হানবেন না। কেউ আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না। প্রতিশোধ–প্রতিহিংসা নয়, আসুন, একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রত্যেকেই আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিই।’
আজ মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাজ্য থেকে এক ভিডিও বার্তায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ‘পালিয়েছেন’, এই শব্দ নির্ভয়ে লিখতে দেশের গণমাধ্যমগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণকারী হাসিনা পালিয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা, আপনারা নির্ভয়ে এই শব্দটি লিখবেন “হাসিনা পালিয়েছে”। এর পরিবর্তে কোনো গণমাধ্যম যদি ভিন্ন শব্দ প্রয়োগের অপকৌশল নেন, সেটি জনগণের কাছে আপনাদের বিবেকের স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে।’
গত ১৫ বছরে গুম, খুন, অপহরণ ও ‘আয়নাঘর’ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আহ্বান, গত ১৫ বছরে যাঁরা গুম, খুন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করুন। সাংবাদিক দম্পতি সাগর–রুনি হত্যা মামলার তদন্ত এক যুগেও কেন শেষ হলো না, সে প্রশ্ন তুলুন। জনগণ আপনাদের কাছ থেকে আয়নাঘর নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট দেখতে চায়। হাসিনা দেশকে লুটেরা রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল, জনগণ দুর্নীতির সেই সব চিত্র সংবাদপত্রে দেখতে চায়।’
গণ–অভ্যুত্থানের চেতনা ও লক্ষ্য সুসংহত করতে হলে বিতাড়িত গণবিরোধী শক্তিকে আইনের মুখোমুখি করার পাশাপাশি জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিকের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা প্রতিবার কীভাবে জনগণের ভোট ডাকাতি করেছিলেন, গণমাধ্যমে সেই সব চিত্র তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের আহ্বানও জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার অপকর্ম ফ্রেমবন্দী থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ হাসিনার মতো ভোট ডাকাতি ও গণহত্যায় লিপ্ত হতে সাহস করবেন না, যা গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করবে এবং ক্ষমতাসীনদের স্বৈরাচারী আচরণ থেকে বিরত থাকতেও বাধ্য করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গণহত্যাকারী হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তাই দেশে জনপ্রত্যাশা পূরণের জন্য একটি নিরাপদ ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার এবং জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এখনই সময়।
তারেক রহমান ফ্যাসিবাদের পতনের দিন ৫ আগস্টকে প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জাতীয় জীবনের একটি বিশেষ দিবস হিসেবে সাড়ম্বরে পালন করার বিষয়টি বিবেচনা করা দরকার বলে মনে করেন।