সাম্প্রতিক সহিংসতায় জড়িত থাকা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
গত পাঁচ দিনে ১৭ জেলা থেকে অন্তত ৪৪ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করছে দলটি। এর মধ্যে যুবদলের ২৭ জন, ছাত্রদলের ১০ জন, বিএনপির ছয়জন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন রয়েছেন।
এ ছাড়া, তিন জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্তত ৪২ নেতাকর্মীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সংগঠনে শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর জোর দেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাছির।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্রদলের কিছু নেতাকর্মী কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএনপির হাইকমান্ড আমাদের নির্দেশ দিয়েছে।’
ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে প্রবেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু পাঁচ-সাতজন নেতাকর্মী এই সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাদেরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
যুবদলের দপ্তর সম্পাদক এম এন ইসলাম সোহেল জানান, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কয়েকজন যুবদল নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তাদেরকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছি। নেতাকর্মীরা যেন সংগঠনের নির্দেশনা সম্পর্কে সতর্ক থাকেন, সেজন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
বিএনপি সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হামলা ও ভাঙচুরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে যেসব ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দলের সুনাম সমুন্নত রাখতে এবং নেতাকর্মীরা যেন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার মতো কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পরেন, তা নিশ্চিত করতেই এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
গত সপ্তাহে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সব নাগরিককে রক্ষা করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের আহ্বান জানান।
যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ঢাকায় কদমতলী থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ককে বহিষ্কার এবং আরও ছয় নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ককে বহিষ্কার করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের দুই সহ-সভাপতিকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
খুলনায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম এনামুল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
৮ আগস্ট খুলনা জেলা বিএনপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি অনেক হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ করেছেন এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিশোধ নেওয়া হতে পারে এই ভয়ে কথা বলার সাহস করেননি ক্ষতিগ্রস্তরা।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বরিশালে জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক, ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড় পৌর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিবকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।
যশোরে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের ১৩ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
পাশাপাশি জেলাগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ের অন্তত ৩৫ জন বিএনপি নেতাকে সতর্ক করা হয়েছে।
ঝালকাঠিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জেলা ও নলছিটি উপজেলা যুবদল আহ্বায়কদের বহিষ্কার করা হয়েছে। একই কারণে সদর উপজেলার উপ-প্রচার সম্পাদককে বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি।
এ ছাড়া, যুবদলের লক্ষ্মীপুরে চারজন, পিরোজপুরে চারজন, লালমনিরহাটে তিনজন, গাজীপুর, নোয়াখালী, মাগুরা ও ঝিনাইদহে দুজন করে এবং নরসিংদীতে একজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মাগুরা পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ককেও বহিষ্কার করা হয়েছে।