দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের নামে একের এক প্রকল্প নিয়ে বাজেট থেকে শত শত কোটি টাকা লোপাট করেছেন। প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। এ খাতে ছিল না কোনো জবাবদিহি। স্বচ্ছতারও কোনো বালাই ছিল। কেননা পলক সব কাজই করতেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে। সরাসরি জয়ের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে কেউ কোনো কথা বলারও সাহস করতেন না। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ আর তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের নামে গত কয়েক বছরে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন পলক।
শুধু তাই নয়, একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দেশের বাইরেও পাচার করেছেন এ খলনায়ক। অথচ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার নামে তিনি প্রকল্পের টাকা মেরে ফুলে ফেঁপে ওঠেন অল্প সময়ের মধ্যেই। সজীব ওয়াজেদ জয়ের খুবই আস্থাভাজন হওয়ায় কোনো কর্মকর্তা, মন্ত্রী, অডিট বিভাগ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাত কিংবা পলককে নিয়ে কোনো কথা বলতেন না। সবশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় দেওয়া তথ্যমতে জুনাইদ আহমেদ পলকের গত পাঁচ বছরে সম্পদ ও আয় দুই-ই বাড়ে অস্বাভাবিক হারে। নিজের অবৈধ আয়ের অর্থ বৈধ দেখাতে স্ত্রীকে উদ্যোক্তা হিসেবে দেখিয়েছেন পলক।
বলা চলে এক রকম শূন্য হাতেই রাজনীতি শুরু করেছিলেন পলক। এর পরই মালিক হয়ে গেছেন হাজার কোটি টাকার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে উদ্যোক্তা হয়ে তিন-চার বছরের মধ্যেই স্ত্রী কণিকা প্রায় ৫ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। যা তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে তাঁর স্ত্রীই অন্তত আরও ২০ কোটি টাকার মালিক বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র। যদিও তিনি ২০১৮ সালে দেখিয়েছেন স্ত্রী কণিকা ২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার মালিক। পরের বছর তা বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৮৪ লাখ।
এর বাইরে নামে-বেনামে আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে পলক ও কণিকা দম্পতির; যা তিনি অবৈধ পথে আয় করেছেন। এসব সম্পদ মূলত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন। যে কোনো প্রকল্প নিলেই তার অন্তত ১৫ শতাংশ দিতে হতো এ প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারকে। এ খাতে প্রকল্প নিতে কোনো প্রকার জবাবদিহির প্রয়োজন হতো না। যার ফলে ইচ্ছামতো প্রকল্প নিয়ে তা বাস্তবায়ন দেখিয়ে বাজেট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেওয়া হতো। যার একটা মোটা অঙ্কের ভাগ পেতেন পলক।
প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কাজ দিতেন কোনো প্রকার যাচাইবাছাই ছাড়াই। ২০০৮ সালে পলক পরিবারের সম্পদ বলতে ছিল সর্বসাকল্যে ১৫ শতক মাঠের জমি, ব্যাংকে ৫০ হাজার, নগদ ১০ হাজার টাকা, ১০ ভরি সোনা, ২৫ হাজার টাকা দামের একটি রেফ্রিজারেটর ও ১০ হাজার টাকা দামের একটি মোবাইল ফোন। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় এখন তিনি ভিশন বিল্ডার্স লিমিটেড কোম্পানির ৮০ ভাগ শেয়ারের মালিক। এখন তাঁর সঞ্চয়পত্র আছে ২০ লাখ টাকার, ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের (ঢাকা-মেট্রো-গ-৩৩-০২৪৫) একটি অত্যাধুনিক প্রাইভেট কার। সোনা ১০৩ ভরি ও নগদ রয়েছে ১০ লাখ এবং ব্যাংকে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৭৩ টাকা। এরপর তাঁর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া সবশেষ হলফনামার তথ্যমতেই তাঁর সোনা রয়েছে কয়েক শ ভরি। নগদ টাকা রয়েছে শত কোটি। পাশাপাশি স্ত্রী ছাড়াও মা, চাচা, শ্বশুর, শ্যালক ও তাঁর ফাইভ স্টার বাহিনীসহ অনুগত কর্মীদের নামে-বেনামে পলক শত শত বিঘা জমি কিনেছেন ও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তাঁর নির্বাচনি এলাকায় ও এর বাইরে। পলকের বড় ভাই জুবাইর আহমেদ নয়ন সম্প্রতি তাঁর ভাইয়ের টেন্ডারবাজি, ৬৫০টি পুকুর দখল করেছেন। একই সঙ্গে চাকরি বাণিজ্য, কালো টাকা, হত্যা বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি কমিশন, খাসজমি বরাদ্দ বাণিজ্যসহ অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন পলক। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে পলক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে এলাকায় পোস্টারও ছাপানো হয়। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক মামলাও রয়েছে; যা নিয়ে পলক একাধিকবার দুদকে হাজিরাও দিয়েছেন।