যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী এবার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভিযোগে নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দলটিকে নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার কথা বলছে সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় নিষিদ্ধ করতে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রস্তুত করা হয়েছে। যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।
এদিকে গতকাল সকাল থেকেই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের বিষয়ে নানামুখী আলোচনা ও তৎপরতা দেখা যায় সচিবালয়ে। জামায়াত নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে গত রাত সোয়া ১২টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে ফাইল আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এসআরও নম্বরের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তারা ফেরত পাঠালে আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করব। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারায় জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে। ওই বিধিতে নিষিদ্ধের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া আছে। বিস্তারিত প্রজ্ঞাপনে থাকবে।’ আইন মন্ত্রণালয় থেকে পাঠালেই যে কোনো সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্র সচিব।
এর আগে গতকাল সকাল থেকেই দফায় দফায় বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সন্ধ্যায় সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘যে কোনো সময় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।’ কোন প্রক্রিয়ায় জামায়াত নিষিদ্ধ হবে-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এটি এখনো প্রক্রিয়াধীন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত-শিবির আগেও নিষিদ্ধ ছিল। এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ এবং সুশীলসমাজ জামায়াতকে নিষিদ্ধের কথা বলে আসছেন। এটা সাধারণ মানুষের দাবি ছিল। এ নিয়ে গত সোমবার ১৪ দলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে তারাও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে নতুন করে দেশে অশান্তি হবে কি না-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরই তো এ অবস্থা তৈরি করে রেখেছে। এ অবস্থা তৈরি করার পেছনে তাদের যথেষ্ট যোগসাজশ রয়েছে। কোটা আন্দোলনের সবকিছু মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন থামছে না, সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। পরামর্শদাতারা পরামর্শ না দিলে ছাত্ররা ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড ঘটাত না। এই যে এত মানুষ হতাহত হয়েছে, সবই কি পুলিশের গুলিতে হয়েছে? আমরাও প্রকাশ করব, কার গুলিতে কতজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে। সবই আমরা প্রকাশ করব। এসব কিছু ছাত্ররা করেনি। ছাত্রদের পেছন থেকে জামায়াত-বিএনপি ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোও সম্পৃক্ত ছিল বলে আমরা জেনেছি।’
ব্রিফিংয়ের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সচিবালয়ের অফিস ত্যাগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে স্বরাষ্ট্র সচিবসহ এ মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে মধ্যরাত পর্যন্ত অফিস করতে দেখা গেছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯-এর ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, কোন ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে পারিবে’। ১৮ (২) ধারায় বলা হয়, ‘সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, যে কোন ব্যক্তি বা সত্তাকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করিতে বা তফসিল হইতে বাদ দিতে পারিবে অথবা অন্য কোনভাবে তফসিল সংশোধন করিতে পারিবে’।