কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ্যে এসেছে। তাই রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সংগঠনের সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্র নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে দলটির হাইকমান্ড। এ আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা প্রতিরোধে দলটি রাজপথে অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। সেটিকে রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন দলের নেতাদের অনেকে। এই ব্যর্থতার প্রশ্নে এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্র নেতারা একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নেতাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি, তর্কাতর্কি বা বাদানুবাদ পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বস্তরে সাংগঠনিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসেছে। দলের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বেশ কিছু কারণও সামনে আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত সম্মেলন না হওয়া, নানা কারণে ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মীদের অভিমানে সরে যাওয়া, কমিটিতে হাইব্রিডদের প্রাধান্য, নেতৃত্ব নির্বাচনে আর্থিক লেনদেনের প্রবণতা, যোগ্যদের বঞ্চিত করা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বজনপ্রীতি অন্যতম।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে দলের দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া এবং জনমত বিপক্ষে চলে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে সরকারের প্রতি তরুণ প্রজন্মের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা ভাবাচ্ছে তাঁদের। দলের বিভিন্ন স্তরে আলোচনায় দল পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, এখন ঘুরে দাঁড়াতে হলে দল পুনর্গঠনে হাত দিতে হবে। নতুবা পুরোনো মুখ ও পুরোনো নীতি নিয়ে মানুষের মন জয় করা যাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ধাক্কা এলে সামলানো কঠিন হবে।
দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা হিসেবে সম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ গত চার দিন মূল্যায়ন সভা করেছে বলে গতকাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, গত চার দিনে আমরা যে বৈঠকগুলো করেছি, কোথাও কি হাতাহাতি, মারামারি হয়েছে? তর্ক-বিতর্ক গণতন্ত্রের প্রাণ।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা করে। এখানে বিতর্ক হতেই পারে। যেকোনো বিষয়ে তর্ক হতেই পারে। কিন্তু কেউ তো মারামারি করেনি। কোনো হাতাহাতি হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা তো রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করছি। প্রশাসনিকভাবে মোকাবেলা করছি। বৃহস্পতিবার নেতাকর্মীদের সতর্ক করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে যে পরিস্থিতি তাতে সময় আরো খারাপ হতে পারে। শত্রুরা আড়ালে আবডালে আরো প্রস্তুতি নিয়ে আক্রমণ করতে পারে। বিএনপি-জামায়াতের টার্গেট শেখ হাসিনার সরকারের পতন। আজকে সাহসী নেতার দরকার। সাহস করে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আপনারা প্রস্তুত হোন।