bnp1

তরুণ যেসব নেতাদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছে বিএনপি

নিষ্ক্রিয়, ব্যর্থ ও প্রবীণদের সরিয়ে তরুণদের দলের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যার অংশ হিসেবে আন্দোলন থেকে পালিয়ে থাকা নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা নেতাদের দেওয়া হচ্ছে ‘উপহার’।

সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে রদবদল করা হয়েছে। ৪৫ নেতার দায়িত্ব বদলেছে। ডাকসাইটের পাঁচ যুগ্ম মহাসচিবকে পাঠানো হয়েছে উপদেষ্টা কাউন্সিলে। আবার দীর্ঘদিন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে না থেকেও কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।

এ ছাড়া ভেঙে দেওয়া হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটি। বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক কমিটির মাত্র সাতটি বাদে বাকিগুলো মেয়াদোর্ত্তীণ। আগামী এক বছর এসব কমিটি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, নির্বাচন কমিশনের আইনি বাধ্যবাধকতা থাকায় ২০২৫ সালে সীমিত পরিসরে হলেও দলের কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। সেজন্য সারা দেশে কমিটি করে কাউন্সিলর তালিকার কাজ দ্রুত শুরু করতে চায় দেশ দশকের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সদ্য বিদায়ী একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এই দলে সবাই কর্মচারী। মালিকের মন-মর্জির ওপর নির্ভর করে এখানে পদ দেওয়া হয়। মালিকের কখন কার ওপর রাগ ওঠে, কখন কার ওপর হাতের পরশ পড়ে, বলা মুশকিল। এ দেশের বড় দুইদলের চরিত্র আসলে একই।

সদ্য সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন এমন একজন বিএনপি নেতা বলেন, আন্দোলনে আমি সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছি, কী কী করেছি পার্টির চেয়ারম্যান সব জানেন।

হয়তো তারই রিওয়ার্ড পেলাম। এত বছর আমাকে নানাভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে। নিজের ঘরের রাজনীতির চাইতে বড় রাজনীতি আর নাই। বড় দলে এক পাশে সন্তোষ – আরেকপাশে অসন্তোষ নিয়ে চলতে হয়।

চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করার কথা বিএনপির ঢাকা মহানগর দুই শাখার কমিটি। দলটির দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, উত্তরে আমান উল্লাহ আমান আর দক্ষিণ বিতর্কিত আবদুস সালাম নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন। তাদের স্থানে ঢাকার বিভিন্ন আসনে নির্বাচনে আগ্রহী নেতাদের দেখা যাবে। বিশেষ করে যুবদলের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মূলদলের রাজনীতিতে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের সুপার টু’তে থাকতে পারেন বিদায়ী কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল হক, কারাবন্দী সাইফুল আলম নীরব, এসএম জাহাঙ্গীর, আতাউর রহমান ঢালী, মামুন হাসান। আর দক্ষিণে সুপার টু’র জন্য আলোচনায় আছেন নবী উল্লাহ নবী, হামিদুর রহমান, তানভীর আহমেদ রবিন, রফিকুল ইসলাম মজনু, হাবিবুর রশিদ হাবিব।

মূলত দক্ষিণে মির্জা আব্বাস ও মরহুম সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীদের থেকে দুইজন দায়িত্ব পাবেন। এর মধ্যে হামিদুর রহমান হামিদ ও রফিকুল ইসলাম মজনুর নেতৃত্ব কমিটি হওয়ার জোর গুঞ্জন রয়েছে।

এ ছাড়া শিগগিরই ঘোষণা করা হবে বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের চার শাখার কমিটি। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির জানান, শুধু ২৮ অক্টোবর নয়, গেল কয়েক বছর ধরে যারা সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিল তাদের দায়িত্বে আনা হবে। এর মধ্যে কমিটির তালিকা ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

আর ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আন্দোলনমুখী কমিটি হবে ছাত্রদলের।

তবে ছাত্রদলের একজন সহ-সভাপতি বলেছেন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী ছাড়া কমিটিতে শীর্ষ পদে কেউ আসবে না। দলের চেয়ারম্যান ছাত্রদল নিয়ে এই দুই নেতার কাছে জিম্মি।

ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের শীর্ষ পদের জন্য আলোচনায় সোহাগ ভূঁইয়া, আল-আমিন, আদিত্য চৌধুরী, সাব্বির আহমেদের নাম। এর মধ্যে সাব্বির আহমেদ রবিউল আলম রবির অনুসারী, বাকিরা মির্জা আব্বাস বলয়ের। সোহাগ-সাব্বির কমিটি হতে পারে বলে গুঞ্জন আছে।

মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের কমিটি শীর্ষ পদে শামীম আহমেদ ও গোলাম রাব্বানী রবিন আসছেন বলে তার সমর্থকরা প্রচার চালাচ্ছেন। তারা দুজনই রকিবুল ইসলাম বকুলের অনুসারী। যদিও শামীম আহমেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া দক্ষিণে আলোচনায় আছেন সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বলয়ের আবদুর রহিম। মির্জা আব্বাস বলয়ের ইব্রাহিম সরকার। সদ্য সদস্যসচিব বিতর্কিত নিয়াজ মাহমুদ নিলয়, রাজু আহমেদ।

ছাত্রদলের ঢাকা উত্তরে দায়িত্ব পেতে পারেন সালাউদ্দিন-মনির হোসেন। এ ছাড়া আলোচনায় আছে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর আরেক অনুসারী রাজিব আহমেদ, মো. মনির, আনিছুর রহমান।

পশ্চিম ছাত্রদলের কমিটিতে আলোচনায় আছেন গোলাম মাওলা গোলাপ, জুয়েল হাসান রাজ এবং আকরাম আহমেদ, মনজুরুল হাসান ইফাত। এর মধ্যে গোলাপ-আকরাম কমিটি হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

এ দিকে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া যুবদলের নতুন কমিটি হচ্ছে দুই-একদিনের মধ্যে। বিদায়ী সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বিএনপির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন কমিটির সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সহসভাপতি নূরুল ইসলাম নয়ন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছে গোলাম মাওলা শাহিন, শফিকুল ইসলাম মিলটন, হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাবেক ছাত্রদল সভাপতি আকরামুল ইসলাম মিন্টু।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, চলমান রদবদল সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্দেশে। দলের চেয়ারম্যানের কাউন্সিল ছাড়াই দলের গঠনতান্ত্রিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে এই কাজ করতে পারেন। আমরা কাউন্সিল করবো, সেজন্য সময় ও প্রস্তুতি প্রয়োজন। দলের সব স্তরের শূন্য পদই শিগশিরই পূরণ করা হবে।

জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে শূন্য পাঁচ পদে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলুর যুক্ত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

Scroll to Top