গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। আন্দোলনে ব্যর্থ নেতাদের বাদ দিয়ে এখন নতুন করে কমিটি গঠন করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দলের মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বর্তমানে নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগরের সাবেক নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’
তবে হঠাৎ বৃহস্পতিবার রাতে একযোগে এতগুলো কমিটি ভেঙে দেওয়া নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। নেতাদের অনেকে মনে করছেন, আন্দোলনে ব্যর্থতা ও সংগঠন গতিশীল করতে না পারায় কমিটিগুলোর নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ দলের শীর্ষ নেতা।
বলা যায়, কমিটিগুলো ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে এক ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত বছর জুলাই থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি সফল না হওয়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নগর কমিটি দলের মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে তখনই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছাত্রদল সভাপতির পদ থেকে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে ‘অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে’ সরিয়ে দেওয়া হয়।
বিষয়টি দলের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। এরপর ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে ডাকা মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার ঘটনায়ও নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দলের আস্থাভাজন, শারীরিকভাবে সুস্থ, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন এমন নেতাদের নতুন কমিটিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি থাকলে সেগুলোও ভেঙে নতুন কমিটি করা হবে। আর যেসব কমিটির মেয়াদ আছে, কিন্তু সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক বিগত আন্দোলনে মাঠে ছিলেন না, তাঁদেরকে কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
এ ধরনেরও একটি তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
বিগত আন্দোলন পরিচালনা এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে সরকার পতন আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কার কী সফলতা-ব্যর্থতা ছিল, এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আগেই ছিল, এখন তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া; এর বেশি কিছু নয়।’ তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠনে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আশা করি, যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসবেন।’
দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, আন্দোলনে সফলতা-ব্যর্থতাসংক্রান্ত দলের প্রতিবেদনকে অনুসরণ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সারা দেশের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনসংক্রান্ত কাজ শুরু করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এবার ঢাকা ও গাজীপুর জেলা, খুলনা, কুমিল্লা ও গাজীপুর মহানগরসহ আরো অন্তত সাতটি জেলা কমিটি, মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় মহিলা দল, তাঁতি দল, মৎস্যজীবী দল ও শ্রমিক দলের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। জাসাসের নতুন কমিটিও যেকোনো সময় ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি পৃথক বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে নেতাদের নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সহযোগিতার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিএনপির চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি গঠনের কথা আগেই জানানো হয়েছিল।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এটা খুব স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।’