কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হয়েছিলেন দুইবারের সাবেক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক ওই এমপির বিরুদ্ধে নির্বাচনী এজেন্ট হয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারেরও। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে চেয়ারম্যান প্রার্থী খাদিজা বিনতে রোশন পেয়েছেন ৩০৩ ভোট। নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোটের কম হওয়ায় বিধি অনুসারে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৩য় ধাপে প্রার্থী হন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টারের মেয়ে খাদিজা বিনতে রোশন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে বৈধ প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন দোয়াত কলম। তার নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট ছিলেন দেবিদ্বার আসনের দুইবারের সাবেক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। সদ্য সমাপ্ত এ নির্বাচনে সাবেক এমপি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট হওয়ায় ওই এলাকা জুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের মধ্যে আনারস প্রতীক নিয়ে মো. মামুনুর রশিদ ৯২ হাজার ৫২১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। অপর দুই প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকে শাহিদা আক্তার পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৮০ ভোট এবং দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে খাদিজা বিনতে রোশন পেয়েছেন ৩০৩ ভোট।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য একজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুকূলে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের ১৫ শতাংশ ভোট যদি কোনো প্রার্থী না পায়, তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এই বিধি অনুযায়ী খাদিজা বিনতে রোশন জামানত রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট না পাওয়ায় নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া অর্থ বাজেয়াপ্ত হবে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বর্তমান এমপি মো. আবুল কালাম আজাদের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মামুনুর রশিদকে হারানোর জন্য তিনি নিজেই ওই প্রার্থীর প্রধান এজেন্ট হয়েছেন।
এ বিষয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মামুনুর রশিদ বলেন, নির্বাচনে সাবেক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল আমার প্রতিদ্বন্দ্বী দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী খাদিজা বিনতে রোশনের প্রধান এজেন্ট হয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ঘুরে প্রভাব বিস্তার করেছেন। এরপরও তিনি তারপক্ষের প্রার্থীর জামানত রক্ষা করতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, আমাকে পরাজিত করতে আমার অনুসারী নেতাকর্মীদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছিলাম।
জানতে চাইলে এ বিষয়ে দোয়াত কলম প্রতীকের প্রার্থী খাদিজা বিনতে রোশন বলেন, প্রথমত প্রধান এজেন্টের কাজ হচ্ছে একজন প্রার্থীর পক্ষে তিনি সকল ভোট কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন এবং নির্বাচনী এলাকার কোনো কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে কোন অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিক প্রিজাইডিং অফিসার বা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদেরকে অবহিত করবেন। দ্বিতীয়ত আমার নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট সাবেক এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে জড়িয়ে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়।\
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, একজন ভোটার হিসেবে যে কেউ তার পছন্দের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হতে পারেন। এছাড়া তিনি বর্তমান এমপি নন। এক্ষেত্রে তার নির্বাচনী এজেন্ট হতে বিধি অনুযায়ী কোনো বাধা ছিল না।