প্রায় ছয় মাস পর আজ হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। ১৩ এজেন্ডা নিয়ে বিকাল সাড়ে ৫টায় এই সভা অনুষ্ঠিত হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কার্যনির্বাহী কমিটির প্রায় সব নেতাকেই। ইতোমধ্যে ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আমন্ত্রিত সবার করা হয়েছে কোভিড টেস্ট। সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন কোভিড ‘নেগেটিভ’ যাদের তারাই। এ ছাড়াও শারীরিক জটিলতার কারণে কয়েকজন অনুপস্থিত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। সভাটি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগেও। কী বার্তা আসতে পারে এই সভা থেকে এমন কৌতূহল সবার।
কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের দেওয়া চিঠিতে ১৩টি এজেন্ডার কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ১২টিতে আছে শোকপ্রস্তাব, মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নির্ধারণ। ১৩তম এজেন্ডায় লেখা রয়েছে ‘বিবিধ’। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই বিবিধ অপশনে গিয়ে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে কথা হবে। দলের সহযোগী সংগঠন, মূল সংগঠনের তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। বিতর্কিত কেন্দ্রীয় নেতা, এমপি ও তৃণমূল নেতাদের আমলনামা অনুযায়ী নির্দেশনা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় পরিকল্পনা হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা’ ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে ‘অনিয়ম’-এর কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য নোয়াখালী-৪ আসনের একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে সতর্ক করা হতে পারে। অন্যদিকে চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এ ছাড়া আরও বেশকিছু নেতাকে হশিয়ার করা হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই এখন স্বস্তির মধ্যে। যে কারণে বড় পরিসরে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হতে যাচ্ছে। তারা বলছেন, ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে এমন সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন আয়োজনের বিষয়েও কথা হবে বৈঠকে।
দলের সভাপতিম-লীর এক সদস্য বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সভা দলের নিয়মতান্ত্রিক একটি প্রক্রিয়া। করোনার কারণে হয়তো এই সভা ঠিকমতো হয়নি। ছয় মাস পর হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচন, জাতীয় সম্মেলন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, জেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে। এ কারণে এবারের সভাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সভা থেকে অনেক বিষয়েই সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সভায় সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হবে। যেখানে সম্মেলন হয়নি, সেখানে কীভাবে করা যায় তা নিয়ে কথা হবে। আসন্ন নির্বাচনগুলোর বিষয়ে কথা হবে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, প্রায় ছয় মাস পরে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা হচ্ছে। সামনে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দিবস আছে। এসব দিবসের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। এ ছাড়া সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা হবে।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় অনেক আলাপই হয়। তবে এটা একান্তই দলের ব্যক্তিগত সভা। এখানে কী আলোচনা হবে তা বাইরে বলার বিষয় নয়। এতটুকু বলা যায়, দলের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে কথা হবে। আগামী দিনে বিভিন্ন ইস্যুতে করণীয় কী, তা নির্ধারণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের আরেক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনে স্বেচ্ছাচারিতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের জন্য একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, দুর্নীতের দায়ে অভিযুক্ত হাজী সেলিম এমপিকে হুশিয়ারি এবং চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানকে দলের পদ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।