দেশে এক ভয়াবহ আর্থিক নৈরাজ্য বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ গণতন্ত্র নয়, স্বৈরাচারের নিষ্ঠুর সাজা ভোগ করছে। ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছে। ক্ষুধার জ্বালায় চোখের পানিতে ভাসছে। নিপীড়ণ সইতে সইতে মানুষের পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষের ভাষাও হারিয়ে গেছে। অসহিষ্ণুতা, সীমাহীন লোভ আর উদ্ধত রাষ্ট্রশক্তিকে আশ্রয় করে সর্বত্রই ফ্যাসিবাদের বিকৃত হিংস্র রুপ প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সীমানায় শুধুই অশান্তির আগুন। বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানোর পর নজিরবিহীন উদ্ভট ডামি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে চালু হয়েছে এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ শাসনব্যবস্থা। গোটা বাংলাদেশ এখন তার হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সর্বত্রই বিরাজ করছে এক ভয়াবহ বিভিষিকা। আওয়ামী লুটেরা, হন্তারক, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতনকারী, খুনি, দখলবাজ-টেন্ডারবাজদের এক উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসের দৃশ্যপট দেশজুড়েই। আর ডামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শঃ জনগণকে নিয়ে বিদ্রুপ, মিথ্যাচার, তামাশা করছেন। দুদিন আগে শেখ হাসিনা বিমসটেক’র মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডেকে বলেছেন- ‘আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের সমস্ত জনগণ এখন গণতন্ত্র উপভোগ করছে।’ আবার গতকাল
বুধবার সকালে গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। বিএনপি একটা সন্ত্রাসী দল। বিএনপি-জামায়াত তাদের অপকর্মের সাজা যেন যথাযথভাবে দ্রুত পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে যে গণতন্ত্রের পদ্ধতি পরমতসহিষ্ণুতাকে মুছে ফেলে একদলীয় একনায়কতন্ত্র স্থাপন করেছেন তা তার এই সাংঘর্ষিক বক্তব্যেই প্রমাণ করে। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ও সত্যের বদলে কায়েম করেছে অন্যায়ের রাজত্ব। দেশে মতপ্রকাশ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নেই। জেনেটিক্যালি ফ্যাসিস্ট বাকশালী দল- আওয়ামী লীগের রক্তের মধ্যেই রয়েছে বাকশালী কর্তৃত্ববাদীর বীজ। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটিকে মুছে দেয়।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার জনগণ মানে তার লুটেরা আওয়ামী লীগার। আওয়ামী নেতাকর্মী, উচ্ছিস্টভোগী, ভোট ডাকাত, দালাল লীগের কর্মচারী-কর্মকর্তাগণ গণতন্ত্রের লেবাস গায়ে জড়িয়ে সুবিধা ভোগ-উপভোগ সবকিছু করছে। শেখ হাসিনা তাদের কথাই বলেছেন। শেখ হাসিনা লজ্জাবোধ না করলেও এদেশের জনগণ লজ্জিত। এই ভেবে যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ক্ষমতা দখলকারী একজন নিত্যদিনই নির্জলা মিথ্যাচার করে চলেছেন। তাতে তার কোনো ব্যতিক্রম হয় না। কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে যে, নির্বাচন হয়েছে ঠিকই কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দেখাতে হবে কোথায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।’০
তিনি বলেন, ভোটের নামে জাল ভোটের প্রতিযোগিতা, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও ভোটের দিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫% ভোটের ঘোষণা দিয়ে গণভবনের চাপে আবার এক ঘন্টা পরেই ৪০% এবং তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারি দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোঁজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর ভূয়া হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলংক তিলক উৎকীর্ণ করেছে ডামি সরকার। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহণহীন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিশ্বের সমস্ত খ্যাতিমান পত্র পত্রিকা, অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভোট বর্জনের এই তথাকথিত নির্বাচনের নামে কি কেলেংকারি ঘটিয়েছেন একনায়ক শেখ হাসিনার মাফিয়াচক্র তা প্রামান্য চিত্রসহ তুলে ধরেছে। সেখানেও শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের একদলীয় শাসন থেকে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তা তুলে ধরে জনগণকে সামনে কি ভয়ংকর বিপদের মুখে ফেলতে চলেছেন তার আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিশ্বের প্রায়সমস্ত মানবাধিকার সংগঠন, অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সিনেটর ডেভিড শুব্রিজসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা শেখ হাসিনার নির্বাচনকে কারচুপিপূর্ণ একতরফা নির্বাচন বাতিল করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিয়ে নতুন করে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। বিশে^র সমস্ত মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন পুরোপুরি “ওয়ান ওম্যান শো\’-এর ঘোষিত জয়-পরাজয়ের ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে। এটা আজ সর্বজনবিদিত যে, মূলত জনগণ বর্জিত এই নির্বাচনে ৫ পার্সেন্টেরও কম ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেছে। ৯৫ পার্সেন্টেরও বেশি জনগণ ডামি নির্বাচন প্রত্যাখান করেছেন।
রিজভী বলেন, কোন মুখে শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারির ভোটারবিহীন \’ডামি নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে দাবি করেন? তিনিতো জানেন, ৭ই জানুয়ারি যা হয়েছে সেটা হলো আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কাউন্সিল। কোনো নির্বাচনই হয়নি। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ডামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমিয়ে থেকে নির্বাচনের নামে যেই সংসদের জন্ম দিয়েছেন, আগামীতে দেশে জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক সরকার গঠিত হলে জনগণের কাছে প্রতিটি টাকার হিসাব দিতে হবে।