সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা, সাজা দেওয়া এবং কারা ও পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। আগামীকাল রবিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে এর চিত্র দেশি-বিদেশিদের সামনে আনতে চাচ্ছে দলটি।
বিএনপির দাবি, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ এবং এরপর এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে অন্তত ৫৭৮টি। একজন সাংবাদিকসহ ২০ জন নিহত হয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ বেশ কয়েকজন নেতা কারাগারে।
এমন প্রেক্ষাপটে এবারের মানবাধিকার দিবসকে বিএনপি বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। মানবাধিকার দিবস ব্যাপকভাবে পালন করতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সারা দেশের জেলা-মহানগর নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করেছেন।
পাশাপাশি বিএনপি সমর্থক নানা অরাজনৈতিক সংগঠনকেও কর্মসূচি আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের বাইরে দলের ইউনিটগুলোকেও এদিন কর্মসূচির আয়োজন করতে বলা হয়েছে। তবে রাজধানীতে বিএনপির মানববন্ধন দলীয়ভাবে হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পুলিশের মনোভাব জেনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলীয়ভাবে আয়োজন সম্ভব না হলে পেশাজীবী কিংবা গুম-খুন ও নির্যাতিত পরিবারের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করতে পারে দলটি।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের মানবাধিকার দিবসের বিশেষ তাৎপর্য আছে। মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকার এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই মানবাধিকার দিবসে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকারসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম-খুন, গ্রেপ্তার, গায়েবি-ফরমায়েশি মামলায় জেলে দেওয়ার মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরা হবে।
গত কয়েক দিনে জেলা-মহানগর পর্যায়ে মানবাধিকার দিবস পালনের প্রস্তুতি সভাগুলোতে নেতাদের মুখে চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের চিত্র শুনেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, মানবাধিকার দিবসে এসব সামনে নিয়ে আসতে হবে। তাই সারা দেশে একযোগে কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনার পর বিএনপি নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর চলমান হরতাল-অবরোধে নেতাকর্মীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। নেতাকর্মীদের বাড়িতে না পেলে তাঁদের স্বজনদের গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে কয়েক জায়গায়। কয়েক জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করেছেন বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়।
গতকাল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বর রবিবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ঢাকায় গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করা হবে। রাজধানীতে রবিবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন হবে।