আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ১৪৩টি আসনে যাচাই-বাছাই শেষে বিভিন্ন অভিযোগে ২৭৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে ২৩টি মনোনয়নপত্র। গত শুক্রবার থেকে শুরু যাচাই-বাছাইয়ের আজ সোমবার শেষ হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ঢাকা জেলা ও মহানগরীর ২০টি আসনের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাছাই হবে আজ। নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সারা দেশে যাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ, চট্টগ্রাম-৪ আসনে বর্তমান এমপি দিদারুল আলম, বগুড়া-৪ আসনে আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম ও ঝালকাঠি-১ আসনে বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুন। ঋণখেলাপি, তথ্য না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ঋণ খেলাপের দায়ে মুন্সীগঞ্জ-১ (শ্রীনগর-সিরাজদিখান) আসনে বিকল্পধারার প্রার্থী মাহী বি (বদরুদ্দোজা) চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তিনি আসনটির বর্তমান এমপি ও বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবির ও বিএনএমের প্রার্থী ফরিদ হোসেন এবং মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সোহানা তাহমিনার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। সোহানা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
মানিকগঞ্জে তিনটি আসনে ৩৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। পঞ্চগড়-১ আসনে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। খুলনার তিনটি আসনে (৪, ৫ ও ৬) ৩৩ প্রার্থীর মধ্যে জাপা নেতাসহ ১৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ও তিনজনের স্থগিত করা হয়েছে। রাজশাহীর ছয়টি আসনে ৬০টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ১৭টি বাতিল করা হয়েছে। স্থগিত হয়েছে সাতটি।
কিশোরগঞ্জ-১, ২ ও ৩ আসনে ৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। তাঁরা হলেন কিশোরগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর আখতারুজ্জামান, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ।
খাগড়াছড়ির একমাত্র আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সমীর দত্ত চাকমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। অন্য দুজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত রাখা হয়েছে।
মেহেরপুর-১ আসনে তিন প্রার্থীর ও মেহেরপুর-২ আসনে পাঁচ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল এবং এক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে।চট্টগ্রামের আট আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুচ ছালাম, গিয়াস উদ্দিনসহ ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সিরাজগঞ্জের তিনটি (১, ২ ও ৩) আসনে মোট ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। শরীয়তপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা ও শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখিপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. খালেদ শওকত আলীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। বান্দরবানে দাখিল করা তিনটি মনোনয়নপত্রই বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর বাহাদুর উশৈ সিং।
বগুড়ার সাতটি নির্বাচনী আসনের মধ্যে চারটির মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ৪৮ জনের মধ্যে আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং সাতজনের স্থগিত করা হয়েছে। দিনাজপুরের ছয়টি আসনে চারজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বাগেরহাট-১ ও বাগেরহাট-২ আসন থেকে মোট চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ঝালকাঠি-১ আসনে বজলুল হক হারুনসহ ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ভোলার চারটি আসনে ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ-২ আসনে আটজন প্রার্থীর মধ্যে দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে।
বরিশালের ছয়টি আসনে ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে ৪৩ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। চারজনের মনোনয়নপত্র নিয়ে আপত্তি তোলা হয়। ঝিনাইদহ-৩ আসনে মোট সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দুটি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। গাজীপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফরিদপুর-১ আসনে একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র স্থগিত এবং দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। জামালপুরের পাঁচটি আসনের তিনটিতে ১৮ জন প্রার্থীর মধ্যে আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচটি আসনে ৫৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। যশোরের ছয়টি আসনে ১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। জয়পুরহাটের দুটি সংসদীয় আসনে ১৯ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে স্বতন্ত্র তিনজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের তিনটি আসনে ৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। পটুয়াখালীর চারটি আসনে ২৮ প্রার্থীর মধ্যে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
নেত্রকোনার পাঁচটি আসনে ৩৬টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ১৩টি বাতিল করা হয়েছে। নীলফামারীর চারটি আসনে ৩৭টির মধ্যে আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। সাতক্ষীরার দুই আসনে দুজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। শেরপুরের তিনটি আসনের মধ্যে দুই আসনে বাছাই হয়। এতে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বরগুনার দুই আসনে ২২ জন প্রার্থীর মধ্যে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাবনার তিনটি আসনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ১১টি আসনের ২৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি আসনে ছয়জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৭ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের দুটি আসনে সাতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
লালমনিরহাটের তিনটি আসনে যাচাই-বাছাই শেষে মোট ২৭ জন প্রার্থীর মধ্যে আটজনের মনোনয়নপত্র বাতিল এবং একজনের মনোনয়নপত্র স্থগিত করা হয়েছে। নরসিংদীতে দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কুড়িগ্রামের চারটি আসনে ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
নোয়াখালী-৪ আসনে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং নোয়াখালী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্ত ও বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরনের মনোনয়নপত্রসহ জেলায় মোট ১৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
কক্সবাজার-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কুমিল্লার ১১টি আসনে ২৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।