রাজধানীতে পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর একই দিন সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একই দিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তরগেটে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সমাবেশের আগেই দুদলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা কথার লড়াইয়ে পরস্পরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। নেতাদের এই বাগযুদ্ধ রাজপথে সংঘাতের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। পাশাপাশি এদিন রাজধানীতে যানজট ও দুর্ভোগের শঙ্কায় শঙ্কিত নগরবাসী।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর ছাড় নয়, পাকিস্তানের বন্ধুদের হাতে এই দেশ ছেড়ে দেব না। তাদের হাতে দেশ, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, উন্নয়ন কিছুই নিরাপদ নয়।
অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২৭ জুলাই বিএনপির মহাসমাবেশের দিন যুবলীগ কর্মসূচি দিয়ে সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তবে কোনো সহিংসতা করে এই মহাসমাবেশকে নস্যাৎ করা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র ও শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের কথা লড়াইয়ের পর সমাবেশকে ঘিরে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। নেতাদের কথায় উজ্জীবিত হয়ে কর্মীরা তাদের পেশিশক্তি প্রদর্শনে আগ্রহী হতে পারে; পরস্পরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকরা। সমাবেশস্থলে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার থাকলেও ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় কর্মীদের মধ্যে সংঘাত হতে পারে।
এদিকে পুলিশ বলছে, সমাবেশ ঘিরে তিনস্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমাবেশস্থলে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা তদারকি করা হবে। সেই সঙ্গে সমাবেশস্থলগুলো পর্যবেক্ষণ করবে ড্রোন। সংঘাত হলে প্রতিরোধ করবে পুলিশ। সে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে আমাদের প্রত্যাশা, তারা সংঘাতে জড়াবেন না। কেউ যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, জানমালের জন্য ক্ষতিকর হয়, তা হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে যানজট জনদুর্ভোগ বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকা নগরীতে এমনিতে যানজট থাকে। এর পর যদি কোথাও ছোট একটি সমাবেশে ৫০০ লোকও হয়, তার প্রভাব পড়ে সারা শহরে। সমাবেশ ঘিরে যানজট হলে পুলিশের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে আমাদের প্রত্যাশা- রাজনৈতিক দলগুলো যেন জনগণের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এ দুটি স্থানের কথা গত সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে (ডিএমপি) অবহিত করা হয়েছে। বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে গতকাল রাত ৮টায় খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত অনুমতির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এতটুকুই আমি জানি।
পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২৭ জুলাই মহাসমাবেশ ও সমাবেশ নিয়ে পুলিশ ইতিবাচক। কোনো দলের কর্মসূচিতে আগ বাড়িয়ে পুলিশ বাধা দেবে না। তবে যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রয়োজনে তারা কঠোর হবে। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা করা হবে। বিশেষ করে রাজধানীর প্রবেশ মুখের চেকপোস্টে থাকবে কড়াকড়ি। কর্মসূচিকালে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাপ্রবাহের স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণ করা হবে। এ ছাড়া ডিএমপির পাশাপাশি র্যাব, সিআইডি, পিবিআই, শিল্প পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, এপিবিএন, নৌপুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য ইউনিট সক্রিয় থাকবে। সমাবেশ ও মহাসমাবেশস্থলের আশপাশের উঁচু ভবনে বসানো হবে ওয়াচ টাওয়ার।
পুলিশ বলছে, অতীতে ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে সংঘাত ও জালাও-পোড়াও হয়েছে। কর্মসূচিগুলোতে ভাঙচুর ছাড়াও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও, পেট্রল বোমার বিস্ফোরণে বহু হতাহত হয়েছে। তবে যে কোনো ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। আপাতত অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনাও পেয়েছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের। তবে সম্প্রতিক অতীতে তেমন কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। তাই সংঘাতের ঝুঁকি কম দেখছে পুলিশ।
ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সমাবেশস্থলে বিপুলসংখ্যক সিসি ক্যামেরা থাকবে। পুলিশ সদস্যরা ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করবে এবং ছবিও তুলবে। ড্রোন সমাবেশস্থলে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে। কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একাধিক ড্রোন সমাবেশস্থল পর্যবেক্ষণ করবে। কেউ নাশকতা কিংবা বিশৃঙ্খলা করলে ভিডিও ও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। কর্মসূচির নামে যদি কেউ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায়, তা হলে ছাড় দেওয়া হবে না এমন মনোভাব রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সব কর্মসূচিতে সহায়তা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ডিএমপিতে ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ সমাবেশকে ঘিরে মোতায়েন করা হবে। সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তার জন্য ডিএমপির বাইরের পুলিশ সদস্যদের প্রয়োজন পড়বে না বলেও তিনি জানান।
পুলিশ সূত্র জানায়, নাশকতার পুরনো মামলার আসামিদের বিষয়ে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। থানাভিত্তিক নাশকতার মামলার আসমিদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সমাবেশ ঘিরে তারা যেন কোনো ধরনের অপরাধ না ঘটাতে পারে থানাপুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে।