সিলেট সিটিতে বিশাল ব্যবধানে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামানের জয়

সিলেট সিটিতে বিশাল ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামানের জয়
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই বাজিমাত করলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী - সংগৃহীত ছবি

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবার মনোনয়ন পেয়েই বাজিমাত করলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। যুক্তরাজ্যে বসবাস করা এই আওয়ামী লীগ নেতা ১ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ ভোট পেয়ে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৫১ হাজার ২০০।

দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আনোয়ারুজ্জামান যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি সিলেটের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। সেসময় বিভিন্ন সভা সমাবেশে দলের মনোনয়ন পেলে নির্বাচন করবেন বলেও ঘোষণা দেন আনোয়ারুজ্জামান। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার অত্যন্ত কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত।

১৫ এপ্রিল সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এর আগে ১০ এপ্রিল তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম নেন। আনোয়ারুজ্জামান ছাড়াও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন আরও ১০ জন। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি তিনি দেশে ফেরেন। ওই দিন সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে স্বাগত জানায়।

ফেব্রুয়ারিতে সিলেট নগরীর একটি ওয়ার্ডে শীতবস্ত্র বিতরণকালে আনোয়ারুজ্জামানের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তার এমন বক্তব্যের পর সিলেট নগরজুড়ে ‘আনোয়ারুজ্জামানকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই’ স্লোগান দিয়ে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড ছেয়ে যায়। তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ঘন ঘন দেখা-সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। সাধারণ মানুষের কাছে যেতে সভা-বৈঠকে অংশ নেন।

জানা গেছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী একজন ক্লীন ইমেজের রাজনীবিদ। ছাত্র জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাঙ্হে জড়িত। কলেজ জীবনে তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে গিয়েও থেমে থাকেননি। প্রথমে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। এরপর এ পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। দুইবার তিনি মেয়র পদে নির্বাচিত হলেও ২০১৩ ও ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ২০২০ সালের ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কামরান। এবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে।

এদিকে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। ইভিএমে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখতে ৪২ নির্বাহী ও ১৪ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। ১০ প্লাটুন বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৭ হাজার সদস্যকে মাঠে রাখা হয়। ১৯০ প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ দায়িত্ব পালন করছেন সাড়ে ৪ হাজারেরও অধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা। এবার সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টি: এই তিনটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীসহ মোট ৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনের দিন ভোট থেকে সরে দাঁড়ান ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৯০টি। বর্ধিত এলাকাসহ মোট ৪২টি ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৪৭ জন।