সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এই যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সাথে রয়েছে অন্তত চারটি নতুন জোট এবং সমমনা কয়েকটি দল। নেতৃত্বের বিরোধ থেকে অসন্তোষের কারণে জোট ভাঙনের সুর দেখা দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে জোটের কেউ সরকারের সাথে সমঝোতা করছে এবং অনেকে টাকা পয়াসার লেনদেনেও জড়িয়েছে। সে থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে, তাহলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমঝোতায় যাবে।
সাম্প্রতিক সময় বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা ৫৪ দল ও সংগঠনের অনেকেই সরকারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জোটের শরিক গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ওরফে ভিপি নুর।
উল্লেখ্য যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে আপাতত তিনটি বিকল্প নিয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ নির্বাচন অথবা বিএনপি ছাড়া নির্বাচন—এই দুই বাস্তবতা মাথায় রেখেই বিকল্পগুলো ভাবা হয়েছে বলে জানান দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
দলীয় সূত্র জানায়, যা কিছুই করা হোক আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য থাকবে এবারের নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখিয়ে বা রেখে জয়লাভ করা। মূলত তা নিশ্চিত করতেই একাধিক বিকল্প নিয়ে কাজে হাত দিয়েছে দলটি। কারণ এবার সব মহল থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের চাপ আছে।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা গণমাধ্যমের কাছে তিন ধরনের বিকল্পের কথা বলেছেন। প্রথমত, বিএনপি নির্বাচনে এলে কিভাবে জয়লাভ করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বিএনপি নির্বাচনে না এলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ আসনে প্রার্থী দিতে উৎসাহ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত সব দলকেই নির্বাচনে রাখার কৌশল নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদেরও নিজ দলের প্রতীকে সারা দেশে প্রার্থী দেওয়ায় উৎসাহিত করা হবে।
তৃতীয়ত, বিএনপিসহ একাধিক দল যদি একেবারে শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি রাখা হবে। প্রতিটি আসনে এখন থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী ঠিক করে রাখার নির্দেশনাও দিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি এমনকি বিএনপির সাবেক এমপিদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এসব তৎপরতার অন্যতম লক্ষ্য হলো- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রবণতা আটকানো। বিএনপি নির্বাচনে না এলে ৩০০ আসনের কোথাও যেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ নির্বাচিত হতে না পারেন সে লক্ষ্যে একাধিক বিকল্প নিয়ে এখনই কাজ শুরু করা হয়েছে।
বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী সমঝোতায় যাবে কি না তা এখনো পরিষ্কার নয়। এখন পর্যন্ত সব পরিকল্পনা বিএনপি নির্বাচনে এলে কী হবে এবং না এলে কী হবে—তার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বিএনপি জোট ও এর সমমনাদের দাবি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আওয়ামী লীগ আগেই এই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। এর বাইরে গিয়ে বিএনপিকে এনে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার কোনো ইঙ্গিত বা আলাপ আওয়ামী লীগের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি।
অবশ্য দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদীয় উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, নির্বাচন এখনো দূরে। শেষ পর্যন্ত কী হবে তা এখনই বলা মুশকিল। সময় ও পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনায়ও বদল আসতে পারে।