হিরো আলমের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের অবস্থা আজকে এমন জায়গায় এসেছে, নির্বাচনে হিরো আলমকেও জেতাতে সাহস করে না।
ওবায়দুল কাদেরের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন হিরো আলম। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ নিজেদের অবস্থা এমন জায়গায় এনেছে, হিরো আলম তাদের চ্যালেঞ্জ করছেন, আর ওবায়দুল কাদেরের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সাহস নেই।
গতকাল শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ আয়োজিত প্রতিবাদী পদযাত্রার আগে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগসহ ১৪ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, আজকে এই সরকারের পেটুয়া গুণ্ডা বাহিনী সারাদেশে বিরোধী দলের ওপর হামলা করছে। গণতন্ত্র মঞ্চের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। বিভিন্ন জেলায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের আন্দোলনে অংশ না নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, লুটপাট, দুর্নীতি, দেশকে বিভাজিত করে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে ফেলছে এই সরকারের কাজ। এটাই তারা করতে থাকবেন। বিভিন্ন দেশের কোম্পানি ও সরকারকে সুবিধা দিয়ে কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায় তারা (সরকার) এখন সেই চেষ্টা করছেন। ভাবছেন আদানিকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ দিলেই মনে হয় ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে। এভাবে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় থাকার আপনাদের যে স্বপ্ন-বিলাস, তা দেশের মানুষ ভেঙে তছনছ করে দেবে।
বর্তমান সরকার দেশকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করলে, ওই দেশে আর কিছু ধ্বংস করতে হয় না। উনারা (সরকার) সেই ব্যবস্থা নিয়েছেন। যেখানে শিক্ষা দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়, সেখানে তারা শিক্ষা দিয়ে জাতিকে বিভক্ত করার সব নীতি কার্যকর করছে। আবারও ক্ষমতায় থাকার সুবিধা করার জন্য তারা এটি করছেন। দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করে আপনাদের (সরকার) ক্ষমতায় থাকার এই স্বপ্ন জনগণ ভেঙে চুরমার করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং আগামী সংসদে রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক গুণগত সংস্কার আদায় ছাড়া জনগণ রাজপথ থেকে ফিরবে না। এই তিনটি বিষয় দেশের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণে এক সুতায় গাঁথা হয়ে গেছে। কাজেই এই লড়াইয়ের যে শক্তি, এই লড়াইয়ের যে নৈতিক ভিত্তি, তা এদেশের ১৮ কোটি মানুষের সত্ত্বার সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে যুক্ত। একে মোকাবিলা করার সামর্থ্য এই সরকারের নেই।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, আন্দোলন দমানোর জন্য তারা (সরকার) এখন পুলিশ ও তাদের গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে দমন-পীড়ন করছেন। কিন্তু জনগণ যখন নামে, জনগণ যখন ধাওয়া দেয়, তখন সব গুণ্ডারা পালিয়ে যায় এবং পালিয়ে যাওয়াই তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়ায়। ওবায়দুল কাদের সাহেব তো কোথায় পালাবেন সেটাও ঠিকঠাক করে ফেলেছেন। অতএব, পালানোর জায়গা যেহেতু ঠিক হয়ে গেছে, এখন পালানোর প্রস্তুতি আপনারা নেন। কারণ জনগণ ধাওয়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগ্রাম এখন চলছে উল্লেখ করে সাকি বলেন, আমরা বিরোধী দলগুলো একটি যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। অচিরেই একটি যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে এই যুগপৎ আন্দোলন আরও জোরদার হবে। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে।
এ সময় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে প্রতিবাদী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত যান।