বিতর্কিত পাঠ্যপুস্তক প্রত্যাহার করে নিতে হবে :মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাঠ্যপুস্তকে বিতর্কিত বিষয় যুক্ত করা হয়েছে মন্তব্য করে বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকে যে ধরনের বিষয়গুলো এসেছে এবং শিক্ষকদের যে অনুশীলন বই দেওয়া হয়েছে, এটা আমাদের মুসলমানদের সংস্কৃতি, আমাদের জীবন, আমাদের ধর্মবোধের বিরুদ্ধে। এটা আমরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারি না। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি ঘোষিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে রূপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। গত ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখা ঘোষণা করে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা পরিবর্তন করা হবে, ইস্যু করবেন না।’ মুসলমানের দেশে বিতর্কিত সাবজেট বসিয়ে ইস্যু তো বানিয়ে দিয়েছেন আপনারা। এ দেশের মানুষের সব চিন্তা-চেতনা, ভাবনা, তার সংস্কৃতি, তার ঐতিহ্য সবকিছু অপমান করে বই চাপিয়েছেন। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এসব বই প্রত্যাহার করে নিতে হবে। জাতীয় সংসদকে আওয়ামী লীগ সরকার ‘একদলীয় ক্লাবে’ পরিণত করেছে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তারা (বর্তমান সরকার) ধ্বংস করেছে। জাতীয় সংসদকে একদলীয় একটা ক্লাব তৈরি করেছে সরকার। ‘ইটস এ ক্লাব অব আওয়ামী লীগ।

রাতের ভোট এবং দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রের গেটওয়ে হচ্ছে নির্বাচনব্যবস্থা। ৫ বছর পরপর নির্বাচন করে আপনি দেশ চালনার জন্য পার্লামেন্ট তৈরি করবেন, মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। সেই নির্বাচনী ব্যবস্থাটাকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ ভোটই দিতে যান না। ভোট দিয়ে কী হবে? ভোট তো আমার থাকবে না, আমার ভোট তো অন্য কেউ নিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করতে যত কিছু কারসাজি করা দরকার বর্তমান সরকার করেছে। কখনো ১৫৪ জনকে অপ্রতিদ্ব›দ্বী ঘোষণা করে দেওয়া, কখনো যে তারিখে ভোট তার আগের রাত্রে ভোট নিয়ে নেওয়া এবং সমস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থাকে তাদের পক্ষে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা। এভাবে কাঠামোটাকে তারা নষ্ট করেছে।

সরকারের বিরুদ্ধে জনতার ঢেউ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রতিটা জিনিসের উত্থান-পতন আছে। যে ঢেউ শুরু হয়েছে উত্তাল তরঙ্গের মতো, সমুদ্রের মতো, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) ভেসে যাবে। কারণ, তাদের সঙ্গে জনগণ নেই, জনগণ থাকবে না।

বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের শেষ কথা, ভোটের অধিকারকে ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি, সেই ১০ দফার প্রথমেই এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদকে বিলুপ্ত করতে হবে। এ সংসদের কোনো মূল্য নেই এবং একটা তত্ত¡াবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারের অধীন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে আমরা জয়ী হব।

দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অনেকের (বিএনপির কিছু নেতা) কথায় হতাশার একটু ছাপ খুঁজে পাই। কেন হতাশ হবেন? আমরা তো সাকসেসফুল হচ্ছি, প্রতিটি স্টেপে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আজকে আমি জেলে গেছি, আমি একা জেলে যাইনি তো। হাজার হাজার আমাদের নেতা-কর্মী জেলে গেছেন। তাদের মুখে আমি এতটুকু হতাশার ছাপ দেখিনি। আপনারা যারা জেলের বাইরে রয়েছি তারা হতাশ হবো কেন?

আইন শৃংখলা বাহিনীকে সরকার দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন অসম লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছি। আমাদের প্রতিপক্ষ যারা, তারা প্রবল প্রতাপশালী, ক্ষমতাশালী। তাদের হাতে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র, তাদের হাতে বন্দুক, তাদের হাতে পিস্তল-গ্রেনেড। অবলীলাক্রমে তারা সেগুলো মারে, উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। তিনি আরো বলেন, নয়াপল্টনের অফিসের সামনে মকবুল হোসেনকে (স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা) প্রকাশ্যে গুলি করে মারলো পুলিশ। উল্টো মামলা দিল আমাদের সাড়ে চার শ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। আমরা আসামি না থাকলেও নাকি হুকুমদাতা, নির্দেশদাতা। তাই মূল বিষয় হচ্ছে, আমাদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে, আমাদের জনগণকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, আমাদের রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখতে হবে, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সংবাদপত্রের যাঁরা মালিক, তাঁদের তো বিজনেস হাউস আছে। তাঁদের ব্যবসা করতে হয়, তাঁদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। প্রতিটি মিডিয়া হাউসের সঙ্গে একজন করে গোয়েন্দা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কী লিখবেন, হেডলাইন কোনটা যাবে, কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে, কোনটা প্রাধান্য দেওয়া হবে না সবকিছু নির্দেশ করে দেওয়া হয়। আফটারঅল মানুষকে তো চাকরি করে খেতে হবে। সাংবাদিকেরা চাকরি করেন, ওটাই তো তাঁদের আয়-উপার্জন, তাঁদের তো আকাশ থেকে টাকা এসে পড়ে না, তাঁদের চাকরি করে খেতে হয়। ওই ঝুঁকি নিতে পারেন না সব সময় যে চাকরি গেলেও আপনার ছোট কথাটি লিখবেন, সব সময় পারেন না। তারপরও তারা লিখছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, পত্রিকা সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা, ১০০টা মামলা, হত্যা মামলা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। এ রকম অসংখ্য সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে। আলোকচিত্রী সাংবাদিক শহীদুল আলমের ওপর নির্যাতনের কথা জানেন। প্রতি পদে পদে নির্যাতন হচ্ছেন। তারপরও সাংবাদিকেরা এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও জনগণের কথা বলছেন।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্ববায়ক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাম হাফিজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনিসুর রহমান প্রমুখ।