জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির হারুনুর রশিদের পদত্যাগ

জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ পদত্যাগ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে তিনি পদত্যাগপত্র দেন।

বেলা ১১টার দিকে পদত্যাগপত্র নিয়ে বিএনপির এ নেতা জাতীয় সংসদ ভবনে যান। দুপুর ১২টার দিকে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে বিএনপির সাত এমপির পদত্যাগের ঘোষণা আসে।

পরদিন ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে বিএনপির সাত এমপি জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

তবে বিদেশে অবস্থান করায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ সশরীরে পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেননি। এ জন্য নিয়মানুযায়ী তার আসনটি এতদিন শূন্য ঘোষণা করা হয়নি।

বিদেশে থেকে স্বাক্ষরকৃত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন জানিয়ে আজ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে স্পিকারের উপস্থিতি পদত্যাগপত্র স্বাক্ষরে জমা দিতে হয়। তাই সেদিন আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি। গতকাল রাতেই দেশে ফিরেই আজকে আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।’

আইন ও সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হচ্ছে না দাবি করে হারুন বলেন, ‘জাতীয় সংসদ মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। এখানে কোন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য নেই। এটি একদলীয় সংসদ। আমাদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধিতে এ ধরনের কোন সুযোগ নাই। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাচ্ছে এইভাবে করতে চাইলে অবশ্যই সংবিধান ও আইনের পরিবর্তন আনতে হবে।’

গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযানের বিষয়ে হারুন বলেন, এটি গণতান্ত্রিক সভ্য দেশে কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা নাশকতা, জঙ্গি মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে দাবি করে বলেন, এটি আইনের শাসনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি। দেশে আইনের শাসনের লেশমাত্র কিছু নাই। দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিণত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ এবং মুক্তমত প্রকাশে সাংবিধানিক অধিকার সরকার নিশ্চিত করতে চাইলে অবশ্যই সংবিধানকে বিলুপ্ত ও বাতিল করতে হবে।

অবাধ ‍ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার শরিকদের দাবির তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে বলে দাবি করেন হারুন রশীদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন প্রহসন ও উপহাসে পরিণত হয়েছে।’

সরকার কূটকৌশল ও অপকৌশলের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছে বলে দাবি করেন হারুনুর রশিদ। তিনি আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের (বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ) শরিকদের সংসদ থেকে পদত্যাগের অনুরোধ জানান। বিএনপির মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীদের সিনিয়র নেতাদের মুক্তির দাবি করেন হারুন।

প্রধানমন্ত্রী জনসভা করে নৌকায় ভোট চাচ্ছেন কিন্তু বিএনপি ও তাদের জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে আগামী নির্বাচন ফাঁকা মাঠে গোল হবে বলে দাবি করেন হারুনুর রশীদ।

তিনি বলেন, সরকার যদি একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায়, তাহলে শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে যেভাবে বিলুপ্ত করে দিয়েছিল, সেইভাবে আইন ও সংবিধান পরিবর্তন করে সংবিধান সংশোধন করে, সমস্ত রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমকে বিলুপ্ত করে করতে পারে ইচ্ছে করলে। কিন্তু জনগণ সেটা গ্রহণ করবে না।

তিনি বলেন, ‘স্পিকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার সুযোগ নেই। তিনি আমাদের অনুরোধ করেছেন, বলেছেন আপনারা সংসদ থেকে পদত্যাগ না করলেই পারতেন। সংসদে আপনাদের বক্তব্য বলতে পারতেন’ এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক সংমদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, মোশারফ হোসেন ও আমিনুল হক।

এদিকে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় বিএনপির পাঁচ সংসদ সদস্যের ‍শূন্য ঘোষিত আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি। সম্প্রতি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ওই আসনগুলোতে মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন ৫ জানুয়ারি, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ৮ জানুয়ারি এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৫ জানুয়ারি।

এছাড়া রুমিন ফারহানা সংরক্ষিত আসনের এমপি হওয়ায় সেখানে নতুন সদস্য মনোনীত করা হবে।