তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ অফিসের চার দেয়াল ও নেতাকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চোখ মেলে বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে একটু তাকানোর জন্য বিএনপি নেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দেওয়ানজি পুকুরপাড়ে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। এর আগে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
ড. হাছান বলেন, মানুষ এবার পবিত্র ঈদুল আজহা পালন করার জন্য স্বস্তির মধ্যদিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পেরেছে। ইসলামি ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে মানুষ ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রেও আমরা যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি সেটি এবার আরও স্পষ্ট হয়েছে। কারণ ভারতীয় গরু এবার আসেনি বললেই চলে।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, সরকারের কঠোর অবস্থান ও সিদ্ধান্তের কারণেই সীমান্ত দিয়ে কোনো পশু দেশে ঢুকতে পারেনি, যাতে আমাদের দেশের খামারিরা উপকৃত হয়। এক্ষেত্রে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশ আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯২তম দেশ। কিন্তু আমরা উৎপাদনের দিক দিয়ে পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধান উৎপাদনে আমরা পৃথিবীতে তৃতীয়, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে তৃতীয়, সবজি উৎপাদনে চতুর্থ, আলু উৎপাদনে সপ্তম।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের গরু-ছাগল দিয়েই এবার ঈদুল আজহার চাহিদা পূরণ করা সম্ভবপর হয়েছে। অনেক গরু-ছাগল বিক্রি না হওয়ায় ফেরতও গেছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় বেশি যোগান ছিল। এগুলো সরকারের নানামুখী নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, \’সমগ্র পৃথিবী, এমন কি অর্থনৈতিকভাবে অনেক সামর্থ্যবান দেশগুলোও সাশ্রয়ীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। প্রধানমন্ত্রী সেভাবেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, বিদ্যুতের দাবিতে কানসাটে মিছিলকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে, হত্যা করেছে, তাদের বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলারই অধিকার থাকে না। আসলে বিএনপির কাছে কোনো ইস্যু নেই তো, তাই কিছু একটা তো বলতে হবে, সেজন্যই কথা বলে।\’
পৃথিবীতে মহামারি চলছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীতে অর্থনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জানেন পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও নানা প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র ছিল। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু যেমন নির্মিত হয়েছে, পৃথিবীর এই সঙ্কটকালীন সময়ের মধ্যেও সমস্ত প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতাকে উপড়ে ফেলে দেশ সমৃদ্ধির পথে অভিযাত্রা অব্যাহত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায় দেশ পৌঁছাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে সেই প্রার্থনা আমরা করেছি, আজকেও একই প্রত্যাশা করি।
চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনটি প্রকল্পে ১১ হাজার কোটির কাছাকাছি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যারা এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে, এই টাকার সদ্ব্যবহার ও সমন্বিতভাবে কাজ করা তাদের দায়িত্ব। যারা জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে আমি তাদের সবসময় তাগাদা দিয়ে আসছি।
মন্ত্রী নিজেও চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই বড় হয়েছেন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, মানুষের প্রত্যাশা ছিল, এবার যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে গতবারের তুলনায় এবার পানি কম উঠবে। যেহেতু জলাবদ্ধতা প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি মাঝপথে আছে, সেজন্য মানুষ এখনো সুফল পাচ্ছে না। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলে যাতে কাজ শুরু হলে দ্রুত শেষ হবে।