বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারকেই দায় নিতে হবে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এসময় তিনি দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, এখনো সময় আছে। এখনও বাঁচতে পারবেন। এখনও কিছুটা রক্ষা পেতে পারেন। এরপরে আর পালাবার সময় পাবেন না।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিদেশে পাঠানোর পাশাপাশি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে, সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং মহানগর দক্ষিণে সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর যৌথ পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, ইকবাল হোসেন শ্যামল, ফজলুল হক মিলন, সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ প্রমুখ।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। রাজনৈতিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। দুর্বার গণ-আন্দোলন শুরু হলে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে। সত্যিকার অর্থেই জনগণের কল্যাণের জন্য সরকার গঠন করা হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কত টাকার মামলা? ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার মামলা। সেই মামলার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এই টাকা কোথাও যায়নি। কেউ তছরুপ করেনি। পুরো টাকাই ব্যাংকে রক্ষিত। এখন প্রায় আট কোটি হয়েছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে আটক রাখার মূল কারণ তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এ জন্যই পরিকল্পিতভাবে, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে, দুদককে নিয়ন্ত্রণ করে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকার কোনো দায় নেবে না-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে। যেটা আমাদের এখানে নেই। যেটা বিদেশে আছে। বারবার চিকিৎসকরা বলছেন। সরকারকেই এর দায় নিতে হবে। আল্লাহ না করুক, খালেদা জিয়ার যদি কোনো অঘটন ঘটে, তাহলে এ দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না। টেনেহিঁচড়ে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়ে নেবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের সলিমুদ্দিন, কালিমুদ্দিন সাজাপ্রাপ্তরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। অথচ মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া বেগম খালেদা জিয়াকে তারা বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। এর কারণ সরকার তাকে ভয় পায়। তিনি যদি রাস্তায় নামেন তাহলে হ্যামিলিওনের বাঁশিওয়ালার মতো মানুষের ঢল নেমে আসবে।
আওয়ামী লীগ বরাবরই আঁতাত করে ক্ষমতায় এসেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আপনারা (আওয়ামী লীগ) ওই শক্তির সঙ্গে আঁতাত করেছেন, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের কথা স্পষ্ট। তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এর বাইরে দেশের মানুষ কিছু মেনে নিতে প্রস্তুত না।
বাজেটের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তো দূরের কথা, বাস্তবে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি সরকার। বরং কেমনে বাড়ানো যায় সেটা করেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়েনি। অথচ করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা ফুটে উঠেছে।
পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এতদিন টাকা পাচার করেছেন। কানাডা, অস্ট্র্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে, বেগম পাড়ায় বাড়ি করেছেন এখন সেগুলো জায়েজ করতে কর দিয়ে টাকা ফেরত আনার কথা বলেছেন।