কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ : উন্নয়নের ১ যুগ’ শিরোনামে তিন দিনের বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী শুরু করেছে। আজ রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরাটন ঢাকা হোটেলে ফিতা ও কেক কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বিশেষ অতিথি ছিলেন। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
প্রদর্শনীতে রয়েছে সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত এক যুগের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বৈশ্বিক অঙ্গনে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলোকচিত্র। এতে শেখ হাসিনার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তের দুর্লভ ছবিও রয়েছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, \”প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের উৎসব নানাভাবে পালন হচ্ছে, হবে। সারা বাংলাদেশে নানা জায়গায় পালিত হচ্ছে, দেশের বাইরেও হচ্ছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, তার ৭৫ বছরের এই জীবনের বিভিন্ন সংগ্রাম, আন্দোলন, কর্মময় জীবনের যে ব্যাপ্তি সেটি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার অনন্য মাধ্যম হচ্ছে এই প্রদর্শনী।\”
প্রদর্শনীর আলোকচিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, \”এখানে লক্ষ করে দেখেছি, চিত্রগুলো বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা যায়। টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম; বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা, ভাই-বোনদের মাঝে তার বেড়ে ওঠা; শিক্ষাজীবন; সাংসারিক জীবন; পারিবারিক জীবন; সন্তানদের ছবি এখানে আছে। এরপর তিনি কীভাবে রাজনীতিতে এলেন, কীভাবে বাংলাদেশের হাল ধরলেন, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন- তার সব কিছুই চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা এখানে আসবেন তারা অনেক নতুন তথ্য পাবেন।\”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে স্পিকার বলেন, ‘আমি লক্ষ করেছি, একটা জায়গাতে তার খুব পাওয়ারফুল একটি স্টেটমেন্ট আছে। সম্ভবত ১৯৮৪ সালে তিনি জাতীয় সংসদের সামনে দাঁড়িয়ে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘‘এই সংসদ জনতার সংসদ’’। এই যে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস, মানুষের শক্তির প্রতি যে বিশ্বাস, মানুষের সমর্থনের প্রতি যে বিশ্বাস, সেটি তার রাজনীতির মূল চালিকাশক্তি। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না, তখনও তার বক্তব্যে সেটির সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখেছি।’
শিরীন শারমিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আজ তিনি চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, তার যে ভিত, সেটা তিনি অনেক কষ্টে রচনা করেছেন। অনেক দুঃসহ পথ পাড়ি দিয়ে এই অবস্থানটি তাকে নিজের জন্য তৈরি করতে হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য তৈরি করতে হয়েছে।’ স্পিকার বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন- ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়, তোমারি হউক জয়। তিমিরবিদার উদার অভ্যুদয়, তোমারি হউক জয়।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা উন্নয়নের কাণ্ডারি। উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। প্রধানমন্ত্রীর মেধা, প্রজ্ঞা, মনন ও একাগ্রতায় বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এসডিজি অর্জনে সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করে চলছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের রোল মডেল।’
অনুষ্ঠানে কানাডিয়ান হাইকমিশনার বেনেইট প্রিফন্টেইন বলেন, ‘এই আয়োজনে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই প্রদর্শনী থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।’
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘আমাদের প্রজন্ম কেন যেন বুঝে উঠতে পারেনি যে, শেখ হাসিনা আমাদের জন্য কত বড় গিফট। আজ থেকে ১০০ বছর পর যে প্রজন্ম আসবে, তারা যখন পেছনে তাকাবে, তখন আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে তারা মূল্যায়ন করতে পারবে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘এই আয়োজন করতে আমাদের এক বছর ধরে কাজ করতে হয়েছে। আসলে গত ১২ বছরে দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে যে, মানুষ তার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংগ্রামী জীবনের কথা ভুলে গেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন করতে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ও সিইও মোহম্মদ শামস্-উল ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের এমডি ও সিইও এহসান খসরু, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূর আলী ও ইউনিক গ্রুপের চেয়ারপারসন সেলিনা আলী।
মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। প্রদর্শনীর সমাপনী অনুষ্ঠান হবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায়। শেরাটন ঢাকা হোটেলের গ্র্যান্ড বলরুমে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।