বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাসায় হবে না কি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে লন্ডনে অবস্থানরত তার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের কাছ থেকে। তবে এ বিষয়ে ঢাকায় তার চিকিৎসক টিমের মতামতও নেওয়া হবে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা ও সকল কাগজপত্র ইতোমধ্যে লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। ডা. জোবাইদা সব কাগজপত্র দেখে এবং ঢাকার মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের কয়েকজন সদস্য তাকে একটি হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য গুলশানে তার বাসার কাছেই ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসিইউ সুবিধা সম্পন্ন একটি কেবিনও বুক করে রাখা হয়েছে। শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে সাথে সাথে তাকে সেখানে স্থানান্তরিত করা হবে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসার একজন কর্মী প্রথমে করোনা আক্রান্ত হন। তার কক্ষে অবস্থান করা বাকিদের করোনা পরীক্ষা করা হলে আরও ৭ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর গত শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা নেওয়া হয়। রাতেই পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরে আবারও পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয়বার পরীক্ষার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায় তার করোনা পজিটিভ।
কিন্তু শনিবার বিকেলে গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করেনি বিএনপি। রোববার দুপুর নাগাদ দল ও ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা গণমাধ্যমকে বার বার বলেন খালেদা জিয়ার করোনার নমুনা নেওয়া হয়নি।
এদিকে রোববার দুপুর থেকেই গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায় যে খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ। এ অবস্থায় বিকাল সাড়ে চারটায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিকাল পৌনে পাঁচটায় তিনি ঘোষণা করেন দলীয় চেয়ারপারসন করোনা আক্রান্ত। এসময় তিনি বার বার দাবি করেন, খালেদা জিয়া শারিরীকভাবে সুস্থ আছেন। তার মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। বাসায় রেখে নিজস্ব চিকিৎসক টিম তার চিকিৎসা করছেন।
এ অবস্থায় রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হন ডা. আল মামুন। যাকে খালেদা জিয়ার ভাগ্নে হিসেবেও কেউ কেউ জানেন। অবশ্য তিনি একজন চিকিৎসক এবং খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমেরও সদস্য। তিনি গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ম্যাডামের শারিরীক অবস্থা আল্লাহর রহমতে ভালো। তার কোনো রকমের উপসর্গ নেই। জ্বর, কাশি, গলাব্যাথা এগুলো কিছুই নেই। বলতে পারেন তাহলে টেস্ট করালাম কেন? কারণ হলো তার বাসার একজন স্টাফের ৫/৬ দিন আগে জ্বর জ্বর ভাব ছিল। তখন তাকে আমরা টেস্ট করাই। টেস্টের পরে পজিটিভ আসে। পরে ওই স্টাফ যে কক্ষে থাকতেন, সেই কক্ষের বাকিদেরও টেস্ট করাই। তাদেরও পজিটিভ আসে। সেজন্য ম্যাডামের নিরাপত্তার জন্য চেক করাই। শনিবার চেক করানোর পরে আজ (রোববার) পজিটিভ আসে। ওই বাসায় এখন মোট ৯ জন করোনা পজিটিভ।
তিনি বলেন, ম্যাডামের কোনো উপসর্গ নেই। আমাদের একটা মেডিকেল বোর্ড আছে, আমরা এই বোর্ড নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে চিকিৎসা করি। এখন পর্যন্ত ম্যাডাম বাসায় আছেন, স্টাবল আছেন। বলতে পারেন, আমি কেন আগে অস্বীকার করেছি। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার প্রত্যেকটা রোগীর প্রাইভেসি রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। আমাকে অনেকে ফোন করেছেন। কিন্তু বলিনি। এখন পার্টির মহাসচিব যেহেতু বলেছেন পজিটিভ আসছে, এখন বললাম।
হসপিটালে ভর্তি করাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনতো তিনি ভাল আছেন। তারপরও আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছি। একটি বেসরকারি হসপিটালে কেবিন রাখা হয়েছে। বাসায় একটা হসপিটাল বানিয়ে রেখেছি। এখানে অক্সিজেন থেকে শুরু করে সব ধরণের প্রিপারেশন আছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের সদস্য প্রফেসর ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের বিষয়ে তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। আপাতত বাসায়ই চিকিৎসা চলছে। ম্যাডাম ভাল আছেন। হাসপাতালে নেওয়া হবে কি না সেটা পরে সিদ্ধান্ত হবে।
ডা. জাহিদ নিজেও গত ১৪দিন যাবত সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে আছেন। তার নিজের শারিরীক অবস্থাও ভালো বলে তিনি জানান।