হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল প্রতিহত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে রাজপথে কঠোর অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী গত ৫০ বছরেও এ দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাণ্ডব চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তারা হরতালের ডাক দিয়েছে। এদের পেছনে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে তাণ্ডব চালানো স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করা বলে আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তারা পরিকল্পিতভাবে হরতাল ডেকেছে। এই হরতালকে কেন্দ্র করে দেশে আবারও যাতে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার ও আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে থাকবে বলে নেতারা জানান।
সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্র জানায়, হেফাজতের হরতাল প্রতিহত করতে আইন-শৃঙ্কলা রক্ষাবাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। হরতালকারিরা মাঠে নামার চেষ্টা করলে বা হরতালকে কেন্দ্র করে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও ওই সুত্রগুলো জানায়।
ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, কোনো হরতাল করতে দেওয়া হবে না বলে। শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাতে তিনি সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডবের বিষয় খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাতে শনিবার (২৭ মার্চ) বিক্ষোভ ও রোববার (২৮ মার্চ) হরতালের ঘোষণা দেয় হেফাজতে ইসলাম। শুক্রবার দুপুরে হেফাজতের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্রগ্রাম ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
রোববারের এ হরতালের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার দেশ গঠনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। এটাকে কেউ যদি সরকারের দূর্বলতা মনে করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এর আগে তারা বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্তে রাস্তায় নেমেছিলো, পরে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এবারও বিএনপি-জামায়াত তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। এই ইস্যু বিহীন হরতালে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে হেফাজতের হরতালের দিন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও রাজপথে থাকবে বলে জানা গেছে। এই হরতালকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সকাল থেকেই দলের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হলে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আছে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী সম্প্রদায়িক গোষ্ঠী গত ৫০ বছর ধরে এ দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি। এখন স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত রয়েছে। এদেরকে ছাড় দেওয়া যাবে না। এদের শুধু প্রতিহতই নয় মুল উৎপাটন করতে হবে। হরতালের নাশে শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী তো আছেই, ব্যবস্থা নেবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সতর্ক অবস্থানে থাকবে। তারাও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই হরতাল প্রতিহত করবে।