নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদীয় আসন সীমানা, সেনা মোতায়েন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে বিএনপি যেসব সুপারিশ করেছে, তার উল্টো প্রস্তাব নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবীর কাওসার বলেন, তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এইচ টি ইমামসহ ২১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ১৮ বুধবার বেলা ১১টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এই সংলাপে যোগ দেবে।
আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির সঙ্গে এই আলোচনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ১১টি প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত রবিবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংলাপে যোগ দেয়। সেখানে ২০ দফা সুপারিশে মোট ৬৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন বিএনপি নেতারা।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রস্তাবের বিষয়ে যা জানা গেছে, তাতে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করা, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ প্রশাসন নিশ্চিতকরাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির সুপারিশের সঙ্গে মিল রয়েছে।
তবে নির্বাচনকালীন সরকার, সংসদীয় আসন সীমানা, সেনা মোতায়েন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে মূল চারটি বিষয়ে দুই দলের অবস্থান বিপরীতমুখীই থাকছে।
নির্বাচনকালীন সরকার
রোববার বিএনপির প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি ‘সহায়ক সরকার’ এর অধীনে নির্বাচন করতে হবে, যা তাদের পুরনো দাবি। বাংলাদেশে ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন হয়েছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।
আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ম চালু করে। আর ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ ওই নিয়ম বাতিল করার পর থেকে বিএনপি তা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। নির্বাচন কোন নিয়মে হবে তা নির্ধারিত হয় সংবিধানের মাধ্যমে, নির্বাচন কমিশনের সেখানে করার কিছু নেই। তারপরও রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান ইসির কাছেই তুলে ধরছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, সংবিধানে যেভাবে বলা আছে, অর্থাৎ ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। সে কথাই তারা ইসির সঙ্গে সংলাপে বলবেন।
আসন সীমানা
সংলাপে বিএনপি দাবি করেছে, ২০০৮ সালের আগে নির্বাচনী আসন সীমানা যে বিন্যাসে ছিল, তা পুনর্বহাল করতে হবে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে, সেখানে দশম সংসদের আসন সীমানাই বহাল রাখার কথা থাকবে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন সীমানায় কিছুটা পরিবর্তন এনে ২০১২ সালে বর্তমান সীমানা নির্ধারণ করে ইসি। ওই সীমানা অনুযায়ীই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি আদমশুমারির সঙ্গে সম্পর্কিত। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আর কোনো আদমশুমারি হচ্ছে না। এই অল্প সময়ের মধ্যে কোনোভাবেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ সম্ভব নয়।
“তাই আগামী নির্বাচনে আমরা দশম সংসদীয় আসনের সীমানা বহাল রাখার পক্ষে মত দেব।”
ইভিএম
শুরু থেকেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিরোধিতা করে আসা বিএনপি ইসির সঙ্গে সংলাপেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে। বিএনপির ভাষ্য, পৃথিবীর যেসব দেশে ইভিএমে ভোট হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই কারচুপি ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, তাদের ১১ প্রস্তাবের মধ্যে ইভিএমে ভোট করার সুপারিশও থাকবে।
“ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আমরা আগে থেকেই বলে আসছি। এটি একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশন যাতে আগামী নির্বাচনে ইভিএম প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করে- সেই প্রস্তাব আমরা দেব।”
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “ইভিএম পদ্ধতিতে দ্রুততার সাথে নির্ভুলভাবে ভোট গণনা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ব্যলট বাক্স ছিনতাই, চুরির কোনো সুযোগ থাকে না। তাই আমরা এই প্রস্তাব রাখব।”
সেনা মোতায়েন
আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে ভোটের মাঠে নামানোর প্রস্তাব ইসিতে দিয়ে এসেছে বিএনপি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়ন থেকে বিরত থাকার প্রস্তাব দেবে তারা। আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, “সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তাহলে এখানে সেনা মোতয়নের কি আছে!
“আগামী নির্বাচনে যাতে সেনাবাহিনী ব্যবহার না করা হয় এমন প্রস্তাব আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে।”
প্রবাসী ভোটার প্রশ্নে সহমত
ইসিতে বিএনপির দেওয়া প্রস্তাবে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও ভোটার তালিকা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও ইসিতে প্রস্তাব দেওয়া হবে।
বুধবার অনুষ্ঠেয় এই আলোচনায় ভোটার তালিকার ‘ভুল’ সংশোধনের বিষয়েও আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব থাকবে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস পি