বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের প্রশাসনিক অঞ্চল সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে বলে মনে করছে ১৪ দল। এ ধরনের ঘটনার পর এখনই হেফাজতের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থান নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ১৪ দলের নেতারা।
১৪ দলের নেতাদের অভিযোগ, অতীতে হেফাজতের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সরকারের নমনীয় মনোভাব পোষণ এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে শাল্লায় এই ঘটনা ঘটেছে।
এক যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত বুধবার (১৭ মার্চ) হেফাজতে ইসলাম বিক্ষোভ করে এবং শাল্লার হিন্দু ধর্মালম্বীদের ওপর হামলা করা হয়। ওই যুবককে পুলিশ গ্রেফতারের পর এই হামলা হয়। হামলায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের ৮৮টি বাড়ি-ঘর এবং ৭৮টি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।
এই হামলার ঘটনা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনা হয়েছে অভিযোগ করে ১৪ দলের নেতারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যখন উদযাপন হচ্ছে তখন স্বাধীনতা বিরোধী এই চক্রটি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের প্রাক্কালে এই ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক বলেও তারা মনে করেন।
এর আগে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রকাশ্য বিরোধিতা এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয় হেফাজত নেতারা। তখন সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই সময় যদি হেফাজতের ওই নেতাদের গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তাহলে নতুন করে তারা এই ঘটনা ঘটনোর সাহস পেতো না বলে ১৪ দল নেতারা জানান।
১৪ দলের নেতারা সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার জন্য হেফাজতকে দায়ী করে এবং এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য এখনই হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। যেভাবে জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেভাবে হেফাজতের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে বলেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন এই ঘটনার আগে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এটা তাদের উদ্দেশ্যমূলক গাফিলতি কিনা তাও তদন্ত করে দেখা উচিত বলে তারা মনে করেন।
জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এই হামলার ঘটনা তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা নয়, এটা পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ। হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন এই ঘটনায় জড়িত। যখন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হচ্ছে তখন এই হামলা। এর আগে হেফাজত নেতারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা এবং ভাস্কর্য টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। বরিশালের ঘটনা, শাল্লার ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সফরে আসছেন, সেই সময় এই হামলা করা হয়েছে। আমরা যা জানতে পেরেছি আগে থেকেই এই ধরনের একটি চক্রান্ত শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা কি শুধুই গফিলতি, না উদ্দেশ্যমূলক গাফিলতি তা তদন্ত করে বের করতে হবে।
তিনি বলেন, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো তখন সরকার এদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিলে আজ এই উস্কানি দেওয়ার সাহস তারা পেতো না। বিষয়টি সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। যেভাবে জামায়াতকে দমন করা হয়েছে সেই একইভাবে হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, এই ঘটনার পর হেফাজতকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অতীতে সরকার এদের ব্যাপারে নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছে। এ কারণেই তারা এই ধরনের সাম্প্রদায়িক আক্রমণের সাহস পেয়েছে। এখনও নমনীয় মনোভাব দেখালে সামাজিক, রাজনৈতিকভাবে লালন করা হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, এই হামলা শুধু সাম্প্রদায়িক হামলাই নয়, এটা স্বাধীনতা বিরোধী একটা চক্রান্ত। যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী যখন উদযাপিত হচ্ছে তখন স্বাধীনতা বিরোধী, সাম্প্রদায়িক চক্র এই হামলা করেছে। এদের ব্যাপারে সরকারের যে অবস্থান তা আরও কঠোর করতে হবে। বিষয়টাকে কৌশলের মধ্যে ফেললে হবে না। নীতিগত অবস্থান দৃঢ় করতে হবে। আমরা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নষ্ট করা মেনে নিতে পারি না।
: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর